৪৭৮ কোটি টাকা বিল বকেয়ার কারণে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এই বকেয়া আদায়ে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও বিল না দেওয়ায় গতকাল দুপুরে ঢাকা ইপিজেডে অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিটি ২০২২ সালের দিকে একবার বকেয়া কিস্তিতে দেওয়ার বিষয়ে আবেদন করেছিল। কোর্ট তাদের বকেয়া কিস্তিতে পরিশোধ করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তারা কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি। সূত্র মতে, ইউনাইটেড গ্রুপের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাসের দাম নিয়ে নজিরবিহীন পক্ষপাত দেখিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ঢাকা ইপিজেড এলাকায় ৮৬ মেগাওয়াট ও অন্যটি চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত (৭২ মেগাওয়াট)। বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির বিষয়ে আওয়ামী সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে দিনেদিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল ইউনাইটেড গ্রুপ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যেহেতু সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে না তাই ক্যাপটিভ বিবেচনায় গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩১.৫০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একই সময়ে আইপিপির (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) জন্য গ্যাসের দর ছিল ১৬ টাকা। কিন্তু আইপিপি রেটে গ্যাস পেতে ইউনাইটেড গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তদবির করে। বিইআরসি সেই দাবি নাকচ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিইআরসির মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। বিইআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল জলিল সাফ জানিয়ে দেন, আইন কোনো ভাবেই আইপিপি হিসেবে কভার করে না। তাই ক্যাপটিভের দরেই তাদের গ্যাসের মূল্য দিতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই আদেশ বহাল রাখে রেগুলেটরি কমিশন। বিইআরসিতে হেরে গিয়ে কোর্টের শরণাপন্ন হয় সরকারের ঘনিষ্ঠ ইউনাইটেড গ্রুপ। সেখানেও হেরে যায় তারা। তারপরও দমাবার পাত্র নন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুদ্দীন হাসান রশীদ। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি বের করে আনেন। যদিও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে দেওয়া পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছে। গত ৭ মার্চ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের চিঠিতে ইউনাইটেড গ্রুপকে ক্যাপটিভ রেটেই গ্যাসের দাম দিতে বলা হয়। আর তারপরেই তৎপর হয়ে উঠে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। দফায় দফায় যোগাযোগ করলেও ইউনাইটেড গ্রুপ সাড়া না দেওয়ায় অবশেষে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
ইউনাইটেড গ্রুপের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ও প্রাইভেট সেক্রেটারি শামীম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে কী কারণে করেছে তা জানা নেই। আমাদের জানামতে কোনো বকেয়া নেই। আমরা আইপিপিতে বিল দিয়েছি। কিন্তু তিতাস বিল দাবি করছে ক্যাপটিভ রেটে।’