পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বিদেশি সহায়তা, চোরাচালানসহ নানানভাবে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে মিয়ানমারের কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মতো বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক তৈরি করে ভয়ংকর রূপে আবির্ভাব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীতে একটি পোশাক কারখানায় ৩০ হাজার ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার করা এমনই ইঙ্গিত বহন করছে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তাই কেএনএফ দমনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন নয়ারহাট এলাকায় কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির একটি কারখানায় অভিযান চালিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে রিংভো অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা থেকে ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়। অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় কারখানা মালিকসহ চারজনকে। গত ১৭ মে এ অভিযান পরিচালনা করলেও রবিবার তা প্রকাশ্যে আসে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি সিএমপির কোনো কর্মকর্তা।
কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির পোশাক কারখানায় অভিযান চালানোর কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির উত্তর জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বায়েজিদে রিংভো অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক তৈরির ৩০ হাজার ইউনিফর্ম অর্ডার করে কেএনএফ। খবর পেয়ে ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক কূটনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে এসে ৩০ হাজার ইউনিফর্মের অর্ডার করার অর্থই হচ্ছে কেএনএফ দুর্বল হয়নি। বরং আগের চেয়ে তারা শক্তিশালী রূপে আবির্ভাব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউনিফর্ম তৈরির বিষয়টি এমনই ইঙ্গিত বহন করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।’ সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- কেএনএফ বিদেশি অর্থায়ন, সীমান্তপথে চোরাচালান এবং স্থানীয় দালালচক্রের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম ও সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। মিয়ানমারের কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মতো বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়াও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের কেএনএফ প্রশিক্ষণ দিত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। কেএনএফের কর্মকাণ্ডের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বম সম্প্রদায়ের মানুষ, ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং জীবিকা হারিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অনেক গ্রামবাসী নিজেদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন এবং তাদের মধ্যে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বেপরোয়া হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে পড়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ, র্যাব এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন কুকি-চিন’ নামে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে নিয়মিত কেএনএফ সদস্য ও নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের অনেক আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।