কভিডের বছর ছাড়া গত ১০ বছর কোরবানিতে প্রায় ১ কোটি করে পশু জবাই হয়েছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় দেশের মাংসের চাহিদা পূরণ করেও পবিত্র ঈদুল আজহায় জবাইযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকছে প্রতি বছর। এবারও ঈদে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে দাবি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এমন সাফল্য কৃত্রিম প্রজনন ও গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি থেকে এসেছে বলে জানান পশু গবেষকরা। তবে কোরবানির আগে গবাদিপশুকে মোটাতাজা দেখাতে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ক্রেতাদের। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করে থাকেন। জানা যায়, আসছে কোরবানিতে পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ কোটি। চাহিদার বিপরীতে ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশু অতিরিক্ত প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৫ সালে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্য প্রজাতির। এর আগের বছর ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি কোরবানির পশু প্রস্তুত ছিল। চলতি বছর প্রায় ২০ লাখ গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পশু গবেষকরা বলছেন, গরুর মাংস উৎপাদনে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি, এআইর ব্যবহার ও মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে দেশ মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এতে চাহিদা মিটিয়ে মাংস রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে শঙ্কা রয়ে গেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ে। অনেক ব্যবসায়ী বেশি দাম পেতে কোরবানির আগে গবাদিপশুর শরীরে অবৈধ স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। স্টেরয়েডযুক্ত পশু কোরবানির পর মাংসের সঙ্গে তা মানবদেহে প্রবেশ করে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবদুর রহমান (রাফি) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গেল কয়েক বছরে দেশের মাংসের উৎপাদন বেড়েছে। এর জন্য পশুপালনে এআইর ব্যবহার ও বিজ্ঞান সম্মত পশু পালন পদ্ধতিতে এমন সাফল্য এসেছে। তবে পশু পালনে অবৈধ স্টেরয়েডের ব্যবহারে আরও সতর্ক হতে হবে। যেন কোরবানির আগে পশুর ওপর ডেস্কমিথনের ব্যবহার না করতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর যদি ডেগাসনের ব্যবহার না কমানো যায়, তাতে মাংস উৎপাদনে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক মো. শাহজামান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাণিসম্পদের প্রচেষ্টায় মাংস উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পন্ন। বিশেষ করে কৃত্রিম প্রজন ও সিমেনের মাধ্যমে উন্নত জাতের পশু উৎপাদিত হওয়ায় মাংস ও দুধের উৎপাদন বেড়েছে। এই পরিস্থিতিকে আরও পরিবর্তন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, গত কয়েকবছরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পশু উৎপাদন বেড়েছে। ব্রিডিং, কৃত্রিম প্রজনন, বুল থেকে সিমেন উৎপাদন ও প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে ১ কোটির বেশি পশু উৎপাদন হয়।