এবারের বাজেটে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেটে গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দেন। বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবারের বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় কম।
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘নাগরিকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতি সচল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে তা যথাসম্ভব সাশ্রয়ী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বাতিল করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় ইতঃপূর্বে সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনার জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৭-২৮ পর্যন্ত সময়ে বাপেক্স কর্তৃক প্রয়োজনীয় জরিপ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া মধ্যমেয়াদে বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দ্বারা ৬৯টি কূপ খনন এবং ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া পরিশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন অশোধিত তেল শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা, ২০০৮ যুগোপযোগী করে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ৩০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।