ঈদ উৎসব শেষে কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকায় ফিরছে মানুষ। সরকারি-বেসরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় গতকাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্রোত ছিল ঢাকামুখী। সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথ-সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দর এলাকায় দেখা গেছে মানুষের ভিড়। ঈদযাত্রার শেষ দিনের মতো ফিরতি যাত্রায়ও মহাসড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটারের যানজট হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। যমুনা সেতুর দুই পাড়ে যানজটের ভোগান্তি ছিল সব থেকে বেশি। বিশেষ করে নারী-শিশু-বৃদ্ধরা দুর্ভোগে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মজীবী মানুষ দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত পরিবহন, মোটরসাইকেলে ঢাকার পথে রওনা করেন। ট্রেনেও ছিল ভিড়। ট্রেনের ছাদেও এসেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভোগান্তি নিয়েই মানুষ ফিরছে ঢাকায়। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থেকে। একাধিক গাড়ি বিকল হয়ে গেলে যানজট আরও দীর্ঘ হয়। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ১৫টির বেশি গাড়ি বিকল হয়েছে বলে জানা গেছে।
বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়া থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার যাত্রীবাহী বাসসংকটের সঙ্গে মহাসড়কে যানজটে পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবীরা। ফলে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টায় ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। অন্যদিকে অতিমাত্রার গরম, সড়কে পানির অভাব, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থেকে পা ফুলে যাওয়া, কোমর ব্যথাসহ নানান সমস্যায় কাহিল হয়ে পড়েছেন বয়স্ক যাত্রীরা। ভোগান্তি সঙ্গী করেই তাঁরা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। বগুড়া থেকে ঢাকায় বাসে পৌঁছাতে স্বাভাবিকভাবে লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টা। সে পথ ঈদের আগে ও পরে পাড়ি দিতে লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় লাগছে তারও বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু যমুনা সেতু পার হতেই লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় যমুনা সেতুর উভয় পাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার করে যানজট লেগে থাকছে। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বাইপাইল, চন্দ্রা, সাভার এলাকায় উত্তরের বাসগুলোকে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, একদিকে মহাসড়কে তীব্র যানজট, অন্যদিকে বাড়তি ভাড়া, পরিবহনসংকট ও তীব্র গরমে ট্রাকের ছাদে উঠে ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ফিরতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গের মানুষকে। গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যমুনা সেতু পশ্চিম পাড় থেকে নলকা পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়কে এমন অবস্থা ছিল। যমুনা সেতুর ওপর বেশ কয়েকটি লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এগুলো অপসারণ করতে নিয়ে আসা রেকারগুলোও বিকল হয়ে যায়। এতে মহাসড়কে ঢাকামুখী ও উত্তরবঙ্গমুখী দুই লেনেই তীব্র যানজট দেখা দেয়। এ যানজট চলতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাসচালক ইব্রাহীম ও আকবর হোসেন জানান, লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি মহাসড়কে নামানো হয়েছে। কারও গাড়ি বিকল হচ্ছে, কোনোটি রংসাইড দিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে যানজট হচ্ছে। এসব বাস রাস্তায় নামতে না দিলে যাত্রীদের দুর্ভোগ হতো না।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যমুনা সেতুর ওপর সড়ক দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল ভোর থেকে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশে যানজটের ফলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। মহাসড়কে যানজট নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন।