জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাস্টিকদূষণ এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হলো জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন ২০২৫। ‘মহাসাগরকে বাঁচান, ভবিষ্যৎ রক্ষা করুন’ স্লোগানে এবারের সম্মেলন আয়োজন হলেও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রসঙ্গ আলোচ্যসূচি থেকে বাদ পড়ায় বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন পরিবেশবাদীরা।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় যৌথ রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে সম্মেলনের শেষ হয়। পাঁচ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে আলোচনায় উঠে আসে গভীর সমুদ্র খননের ঝুঁকি, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, প্লাস্টিক ও রাসায়নিকদূষণ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো জরুরি সংকটগুলো।
‘হাই সিজ ট্রিটি’ নামে পরিচিত এ চুক্তিতে নিসে ১৯টি দেশ নতুন করে স্বাক্ষর করেছে, ফলে মোট স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০। চুক্তি কার্যকর করতে ৬০টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা গভীর সমুদ্র খনন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতারা শক্ত অবস্থান নেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এটিকে ‘পাগলামি’ বলেন এবং ব্রাজিলের লুলা দা সিলভা একে ‘লুণ্ঠনপ্রবণ প্রতিযোগিতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। গভীর সমুদ্র খননের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটে মাত্র চারটি নতুন দেশ যোগ দিয়েছে, মোট সদস্য দাঁড়িয়েছে ৩৭টি। এ জোট আগামী মাসে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের বৈঠকে খননের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে। ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের প্রধান লরেন্স টিউবিয়ানা বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর আর বাস্তব সমাধানের মধ্যে পার্থক্য আছে। কোনো ঘোষণায় সমুদ্রের উত্তাপ কমে না।’ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রসঙ্গটি উপেক্ষিত থাকার সমালোচনা করেন তিনি।
দূষণ রোধে চুক্তির উদ্যোগ : সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে সমুদ্রদূষণ রোধ। ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকসহ সব ধরনের সামুদ্রিক বর্জ্য কমাতে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রস্তাব করা হয়। এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সমুদ্রদূষণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণে আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘নীল অর্থনীতি’ গড়ে তোলার তহবিল : সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে টেকসই করতে গঠিত হয়েছে ৫০০ কোটি ডলারের ‘ব্লু ইকোনমি’ তহবিল। এতে অংশ নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থা। মৎস্য, জাহাজ নির্মাণ, সামুদ্রিক পর্যটন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। ৩০ শতাংশ এলাকা সংরক্ষণের লক্ষ্য : সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে সমুদ্রের ৩০ শতাংশ অঞ্চল সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এর ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।
সমুদ্রের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ : গঠন করা হচ্ছে নতুন একটি ‘গ্লোবাল ওশেন মনিটরিং নেটওয়ার্ক’, যা মহাসাগরের উষ্ণতা ও অম্লতা বৃদ্ধির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবে।
ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রতি সহানুভূতি : সম্মেলনে উন্নয়নশীল ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সহায়তার বিষয়টি গুরুত্ব পায় আলোচনায়।
গুতেরেসের সতর্কবার্তা : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সমুদ্র আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বিপন্ন হলে, আমাদের ভবিষ্যৎও বিপন্ন হবে।’