অনিয়মের মাধ্যমে প্রকাশিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফলাফল বাতিল করে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অনিয়ম ও কারসাজির অভিযোগে আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। পুলিশ বারবার তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও আন্দোলনকারীরা তা না মেনে স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জানা যায়, নিবন্ধনে অনিয়মের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিলেও গত কয়েক দিনের ন্যায় গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন প্রাইমারি শিক্ষক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন জুলাই আন্দোলন চলাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ শেষে দেশে ফেরা প্রবাসীরাও।
শিক্ষক নিবন্ধনে অনিয়মের আন্দোলনকারীরা বলেন, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীর কোনো ভাইভা না নিয়েই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো ভাইভা নেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে ফলাফল দিল? এত সংখ্যক প্রার্থী কীভাবে ফেল করল? এর পেছনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কারসাজি আছে, আমরা এটা মানি না। প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামান ব্যবহারের বিষয়ে ডিএমপির শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, আন্দোলনকারীরা সড়কের সামনে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছিলেন, ফলে আশপাশে তীব্র যানজট তৈরি হয়। আমরা বারবার অনুরোধ করেছি যেন তারা সরে যায়। কিন্তু তারা কথা না শুনে অবস্থান চালিয়ে যেতে থাকে। বাধ্য হয়েই জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢামেক শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম, হলে অনড় অবস্থান
আবাসন সংকটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি তৌহিদুল আবেদীন তানভীর জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. কামরুল আলমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়। কিন্তু আলোচনায় সন্তোষজনক কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় তারা হলে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি, সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল, বিশেষ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এসে ঝুঁকিপূর্ণ হলগুলোর বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
জুলাইয়ে আমিরাতে কারাবরণকারীদের চার দাবি
এদিকে জুলাই আন্দোলন চলাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ শেষে দেশে ফেরা প্রবাসীরাও আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল দুপুরে বিভিন্ন দাবি নিয়ে তারা রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ আটকে দেয় তাদের। এ সময় তারা গণমাধ্যমের সামনে চারটি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই ’২৪ আন্দোলনের মামলায় আমিরাত কারাগারে আটক সব বাংলাদেশিকে দ্রুত মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিগ্রস্ত সব প্রবাসীকে ‘জুলাই প্রবাসী যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের যৌক্তিক ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করা। এ ছাড়া সব ভুক্তভোগী রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। আন্দোলনকারীরা বলেন, কারাবাস শেষে দেশে ফিরে তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন, পেশা হারিয়েছেন, পরিবারে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কিন্তু সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের আবার ফেরত পাঠাতে সরকার নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে।
তিন দফা দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকরা
‘জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিগত সরকারের সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে’ তিন দফা দাবিতে গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (জাতীয়করণকৃত) কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। সমিতির মহাসচিব মো. মহিউদ্দিন খোন্দকারসহ শিক্ষক নেতারা বক্তব্য রাখেন। তাদের তিন দফা দাবি হলো- অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০ সালের ১২ আগস্টের টাইম স্কেল সংক্রান্ত চিঠি প্রত্যাহার করা, ৫০ শতাংশ অর্থাৎ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা প্রদান ও বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করা।