বিশ্ববাজারে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তবে বাজার হিস্সা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদ্য প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস : কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন-২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
ডব্লিউটিওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৫৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ ছিল ৫২০ বিলিয়ন ডলার। চীন ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। যদিও তাদের বাজার হিস্সা ২ শতাংশ কমে হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এক সময় চীনের হিস্সা ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ (২০১৭ সালে)। দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ গত বছর ৩৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। গত বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক আন্দোলন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট এবং বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাতের মধ্যে পোশাক খাতকে উৎপাদন ও সরবরাহে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। এর মধ্যে আশুলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ ছাড়া রপ্তানি পরিসংখ্যানে গরমিল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
২০২২ সালে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেখানো হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন ছিল বলে ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের পরিসংখ্যান। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইপিবি প্রায় ২ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি দেখিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। একক দেশ হিসেবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক, যার রপ্তানি ১৮ বিলিয়ন ডলার (৪ শতাংশ হ্রাস)। পঞ্চম অবস্থানে ভারত, যার রপ্তানি ১৬ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ। ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে-কম্বোডিয়া, ১০ বিলিয়ন ডলার; পাকিস্তান, ৯ বিলিয়ন ডলার; ইন্দোনেশিয়া, ৯ বিলিয়ন ডলার; যুক্তরাষ্ট্র, ৭ বিলিয়ন ডলার।
বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপে পোশাক খাত কিছুটা দুর্বল অবস্থানে থাকলেও এখনো দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখাটা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। তবে আগামী দিনে বাণিজ্য আলোচনায় শুল্ক ইস্যু, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখা না গেলে এ অবস্থান ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।