রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নামে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৪৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এবং ৩৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা অনুমোদন করেছে কমিশন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সিআরআইর ট্রাস্টি এবং সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য রওশন আরা আক্তার এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
দুদক বলছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে জনকল্যাণের নামে গঠিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) নামক একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রাপ্ত অর্থের অপব্যবহার করেছেন।
আক্তার হোসেন বলেন, তারা আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর মওকুফ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যক্তিগতভাবে এবং একে অপরকে অন্যায়ভাবে লাভবান করেছেন। জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যয় না করে, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও এসআরও জারি করে কর সুবিধা গ্রহণ ও প্রদান করেছেন। আসামিরা অবৈধভাবে চাপ প্রয়োগ করে অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে সিআরআইর হিসাবে ২৩টি কোম্পানি থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। ২০১৩-১৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তাদের মোট আয় ছিল ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা। এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য ব্যয় বাদ দিয়ে হিসাব অনুযায়ী থাকা উচিত ছিল ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা কিন্তু প্রকৃত স্থিতি পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর শিডিউল ৬, পার্ট-বি, ১১(বি) ধারা ভঙ্গ করে ৩৬ কোটি ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা কর প্রদান না করে সরকারের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।
দুদক জানায়, আসামিরা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেছেন। ফলে দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।