আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সরকার লকডাউন শিথিল করছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও কঠোর লকডাউন দেওয়া হতে পারে।’
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গণপরিবহনে করোনা পূর্ববর্তীকালে যে ভাড়া ছিল সে ভাড়ায় চলবে, বর্ধিত ভাড়ায় নয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে সকল স্টেক হোল্ডার ও মালিক-শ্রমিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।
গপরিবহন চলাচলের আগে গাড়ি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করার নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যাত্রীদের শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি এ বিষয়ে বিআরটিএকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করছে সরকার। সে অনুযায়ী ১১ আগস্ট থেকে সব সরকারি-আধাসরকারি- স্বায়ত্তশাসিত অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও শপিং মল খোলা থাকবে। একই সঙ্গে অর্ধেক গণপরিবহন শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি থাকবে। গতকাল এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বা বিনোদন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে আদেশে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন আদেশ অনুযায়ী, অফিস-আদালত ও দোকানপাট চালুর পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটে অর্ধেক গণপরিবহন চলবে। তবে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী বহন করতে পারবে। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও সবক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে কঠোর হওয়ার কথা জানানো হয়।
গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন করে আটটি শর্ত দিয়ে ১১ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আটটি শর্তের মাধ্যমে মূলত সবকিছু খুলে দেওয়া হলো।
শর্তগুলো হলো- ১. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। ২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৩. সড়ক, রেল ও নৌপথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে। ৪. শপিং মল/মার্কেট/দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। ৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে। ৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ৭. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এবং ৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দফতর, মার্কেট ও বাজারসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হলেও ঈদের সময় আট দিন বিরতি দিয়ে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তা শেষ হয় ৫ আগস্ট। এর মধ্যে বিধিনিষেধ ১০ আগস্ট পর্যন্ত আরেক দফা বাড়ানো হয়। বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকলকারখানা খুলে দেওয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ