পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে সংবিধান অনুযায়ী এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচনে আপনারা তাদের বর্জন করবেন, ঘৃণা করবেন, যারা রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। আর যেন কখনো রাজাকারের গাড়িতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা লাল সবুজের পতাকা না ওঠে। দেশবাসীকে সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বিশ্বাস করি, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং সচেতন মানুষ আর কখনো রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেবে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়বে না।’
আজ শনিবার সকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘কে -ফোর্সের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদ মোশাররফের কন্যা ও কে-ফোর্সের সভাপতি মাহজাবিন খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কে-ফোর্সের উপদেষ্টা ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, যুবলীগের উপ-মহিলা সম্পাদক সৈয়দা সানজিদা মহসিন, সদস্য আসাদুজ্জামান আজম প্রমুখ। এসময় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল উল্লেখ করে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায়, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের ইন্ধন ছিলে। হত্যা পরবর্তী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে খুনিদের বক্তব্যেই তা প্রমাণ হয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরে আর সামান্য কাল অপেক্ষা করেননি জিয়াউর রহমান। দেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার জন্য এমন কিছু নেই যা তিনি করেননি। জেনারেল জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে। শাহ আজিজ ছাড়াও জিয়া আরও কয়েকজন রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তারা হলেন- মসিউর রহমান (যাদু মিয়া), মির্জা গোলাম হাফিজ, আবদুল আলিম, সামসুল হুদা চৌধুরী, এস এম শফিউল আজম ও খন্দকার আবদুল হামিদ।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযম ঢাকায় আসেন। তার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও জিয়া সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তীতে কয়েক দফা ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে ’৯২ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। ’৯৪ সালে খালেদা জিয়ার আমলে আদালতের রায়ে নাগরিকত্ব ফেরত পায়।’
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার শাসনামলেও খুনিচক্রের প্রধান রশিদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত করা হয়। বিরোধী দলের আসনে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল তাকে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কুখ্যাত রাজাকার নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা দিয়ে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা আর যেন রাজাকারের গাড়িতে না ওঠে, সেজন্য সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে।’
খালেদ মোশাররফের আলোচনা করতে গিয়ে উপমন্ত্রী শামীম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং ‘কে ফোর্সের’ অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করতে যে তিনটি ফোর্স গঠন করা হয়েছিল, এর একটির অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। তার নামের আদ্যক্ষর দিয়েই নাম হয় ‘কে ফোর্স’। স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েকদিন আগে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিনিয়র মেজর থাকা অবস্থায় তাকে শমসেরনগরে বদলি করা হয়। যুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি সৈনিকরা যাতে সংগঠিতভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে, সে পরিকল্পনা থেকেই মূলত খালেদ মোশাররফকে সরিয়ে দেয় পাকিস্তানিরা। শত-সহস্র ষড়যন্ত্র করেও খালেদ মোশাররফকে থামানো যায়নি। পাকিস্তানিদের ২৫ মার্চের গণহত্যার প্রতিবাদ করতেই পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে মেজর শাফায়াত জামিলসহ বিদ্রোহী সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খালেদ মোশাররফ। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার খালেদ মোশাররফকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পঁচাত্তরের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকচক্রকে হটিয়ে দিয়ে খালেদ মোশাররফ যখন মুক্তিযুদ্ধের মুল স্রোতধারায় গণতান্ত্রিক সরকার-রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে, তখন ৭ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে আরেক অভ্যুত্থানে তাকে হত্যা করা হয়।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ