৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৬

'সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী করে গড়তে হবে'

নিজস্ব প্রতিবেদক

'সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী করে গড়তে হবে'

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড ২০২১-২২ অর্থ-বছরে ৪ শত ৪১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আয় করেছে। এর ফলে কোম্পানিটির গত অর্থ-বছরে কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০২১-২২ অর্থ-বছরে সরকার ৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে অর্থাৎ পাঁচ বছর আগে রাজস্ব আয় ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আজ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে এই তথ্য অবহিত করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম আলী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো বলে উল্লেখ করেন। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিকে একটি সময়োপযোগী প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রতি সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির দায় রয়েছে। এই লক্ষ্যে জনগণের নিকট সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরেন মন্ত্রী। 

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউদথের দাম ছিল ২৭ হাজার টাকা। আমরা জনগণের নিকট ইন্টারনেটের দাম সাশ্রয়ী করতে তা বর্তমানে মাত্র ২৪০ টাকায় নামিয়ে এনেছি। বিনামাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। 

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।  

তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৭ লাখ। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ৩৮৪০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি এককভাবেই ২৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ সরবরাহ করছে। অবশিষ্ট ব্যান্ডউদথ সরবরাহ করছে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল কোম্পানিসমূহ (আইটিসি)। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরও একটি ঐতিহাসিক অর্জন উল্লেখ করেন কম্পিউটারে বাংলা ভাষার এই প্রবর্তক। 

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু এবং তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সফলতা তুলে ধরে জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হতে পারে। 

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরও হাতে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডউইথের আছে ও থাকবে। দেশে নেটওয়ার্কের বর্ধিত চাহিদা মিটিয়ে ফ্রান্স, সৌদি আরব ও ভারতের ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হচ্ছে। ভুটান ও নেপাল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ব্যান্ডউদথ রপ্তানি করার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলেও মন্ত্রী জানান।

তৃতীয় সাবমেরিন সংযোগ সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালে অতিরিক্ত আরও প্রায় ১৩২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সংযুক্ত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও প্রথম সাবমেরিন ক‌্যাবলে আরও ৩৮০০ জিবিপিএস ব‌্যান্ডউদথ সংযুক্ত হচ্ছে অর্থাৎ বর্তমানে বিদ‌্যমান ক‌্যাপাসিটির চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ইন্টারনেটকে ডিজিটাল বাংলাদেশের মহাসড়ক আখ্যায়িত করে দেশের মানুষের ডিজিটাল জীবনধারা নিশ্চিত করতে প্রতিটি অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব খলিলুর রহমান, বিটিআরসি‘র ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ এবং টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমানসহ ডাক ও টেলিযোাগযোগ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম আলী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর