১ এপ্রিল, ২০২৩ ১৬:২৩

'জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সু-স্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে'

পিরোজপুর প্রতিনিধি

'জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সু-স্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে'

জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।  

শনিবার সকালে পিরোজপুরের হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, একটা মা ইলিশ ছয় লক্ষাধিক ডিম দেয়। কিছু দুর্বৃত্ত বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইলিশের প্রজননস্থলের পরিবেশ নষ্ট করে। নদী দূষণ করে ইলিশের ডিম ও পোনা নষ্ট করে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে যত্রতত্র মাছ আহরণ করে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন করে। একটা মা ইলিশ ধরা মানে ছয় লাখ ডিম নষ্ট করা। জাটকা ধরা মানে ছোট ইলিশ বড় হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। যারা জাটকা ধরছে, এ মাছ বড় হলে তারাই ধরবে, বড় মাছ বিক্রি করে তারাই লাভবান হবেন। দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খেতে পারবে। 

তিনি বলেন, একটা সময় দেশে মাছের আকাল ছিল। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিশ্বের মোট ইলিশের শতকরা ৮০ ভাগ শুধু বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। ২০০৮-০৯ সালে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং তার সরকারের অবদানের কারণে ইলিশের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মন্ত্রী আরও যোগ করেন, সরকারের লক্ষ্য দেশের প্রতিটি ঘরে সু-স্বাদু ও সুদৃশ্য ইলিশ পৌঁছে দেওয়া এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলে দেশের বাইরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। তাই মৎস্যজীবীদের কাছে আহ্বান, জাটকা যাতে কেউ ধরতে না পারে।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় স্মার্ট মৎস্য খাতের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের পোনা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে অঞ্চলে যে মাছ নেই, সে অঞ্চলে সে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। এভাবে ভাতে-মাছে বাঙালির বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌ-পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ক্যাপ্টেন এস এম এনামুল হাসান, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক সিকদার চান ও পিরোজপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম তানভীর আহমেদ প্রমুখ। মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পিরোজপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেষে জাটকা রক্ষায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণার অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিসহ কয়েকহাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের সাথে পিরোজপুরের হুলারহাট লঞ্চ ঘাট থেকে কচা নদীতে বর্ণাঢ্য নৌর‍্যালিতে অংশ নেন মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, 'করলে জাটকা সংরক্ষণ, বাড়বে ইলিশের উৎপাদন’-এ প্রতিপাদ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ থেকে শুরু হয়েছে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২৩। চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর