কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেছেন, বিচারবিভাগের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের সুযোগ এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জাতির এবং আমাদের প্রত্যাশা খুব শিগগিরই তিনি দেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। দেশের জনগণ যে মূল্যবান ভোটের অধিকার হারিয়েছিল, সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন তিনি। যেই গণতন্ত্রকে শেখ হাসিনা হত্যা করেছিলেন, সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন।
শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের আয়োজনে ইছাপুরায় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, উনার (হাসিনা) বাপের নামে একটি স্যাটেলাইট বানিয়েছেন তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে। যেটার খরচ হয় ১৫০০ কোটি টাকা। যেই স্যাটেলাইট আদৌ কোনো কাজে লাগে না। টাকা চুরি করার জন্য সেই স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। উনার বাবার নামে উঠছে ৩ হাজার কোটি টাকার স্যাটেলাইট, যেটা জনগণের টাকা। সুতরাং উনার দুর্নীতির প্রমাণ শুধু বাংলাদেশ না মহাশূন্যেও ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, যেখানেই তাকাবেন শুধু শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের নামে এইটা, ওইটা। টয়লেটের নামও শেখ মুজিব। কবরস্থানের নামও শেখ মুজিব। জোর করে উনার বাবার ভাষণ শোনাতেন। যেন আমরা নিজেদের বাপের নাম ভুলে গিয়ে তার বাপের নাম বলি। আল্লাহ বানাতে চেয়েছেন তার বাবাকে। পরিণতি কী হয়েছিল, তা আপনারা দেখছেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত একইভাবে শেখ মুজিবকে আল্লাহ বানানোর চেষ্টা হয়েছিল। তার পরিণতিও দেখেছেন।
হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, ১/১১ সরকার যখন আপনাকে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ধরে নিয়ে গেল, আপনার এত শুভাকাঙ্ক্ষী কই কেউতো তখন কোনো বিবৃতি দেয় নাই। যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও আপনার জন্য বিবৃতি দেয় নাই। আপনার দলে এত বড় বড় নেতা কেউ আপনার জন্য বিবৃতি দেয় নাই। বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। আপনি ক্ষমতায় আসার পরপরই খালেদা জিয়াকে তার সেই বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছেন, যেই বাড়ির এক কোণে বসে একসময় জিয়াউর রহমান গল্প করেছেন। ওই বাড়িতে জিয়াউর রহমান তার স্মৃতি রেখে গেছেন। সেই বাড়িতেই সন্তানদের বাবার স্নেহ আর মায়ের ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতি করে সারাদেশের সব ব্যাংক শেষ করে দিয়েছেন। কোনো ব্যাংকে টাকা নাই। উনাকে জিজ্ঞাস করলে বলবে, ‘আমি তো পদ্মা সেতু বানাইছি।’ এই জন্য সরকার আসার পর একটি কমিটি করে দিয়েছিল। ওই কমিটির তথ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৯ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়েছে হাসিনা এবং তার দলের লোকজন। প্রতিবছর লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে কত টাকা? ৩০ হাজার কোটি টাকা! সুতরাং প্রতি বছর আপনি ৬টা পদ্মা সেতুর টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন। এই ২৪ বছরে তাহলে কতগুলো হলো?
কর্মী সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া। কর্মী সমাবেশ উদ্বোধন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন।
কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজি মো. জসিম উদ্দিন জসিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, দক্ষিণ জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মো. মোস্তফা জামান।
শুভেচ্ছা ও স্বাগত বক্তব্য দেন আমেরিকা সিটি বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ভুইয়া। কর্মী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই