বাগেরহাট পুলিশের দেয়া একটি ভূয়া খবরের পেছনে ছুটে একদিন পার করলেন বাগেরহাটের সংবাদকর্মীরা। আর রাতে একই ঘটনায় পুলিশ সাংবাদিকদের জানালেন তারা নিজেরাও প্রতারিত হয়েছেন।
শনিবার দুপুরে খবর আসে বাগেরহাটে বিকাশের ৬০ লাখ টাকাসহ এজেন্ট মেসার্স লাক্ষী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. শাহিন পালিয়ে যাবার সময় কুমিল্লায় সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়ে ড্রাইভারসহ আটক হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আজম খান শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, পালিয়ে যাবার সময় কুমিল্লায় সড়ক দূর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারের ড্রাইভারসহ শাহিন আটক হয়েছে। আটক শাহিনকে আনতে বাগেরহাট থেকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। ওই দুইজন বর্তমানে সেখানকার বিজিবির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এদিকে, ৬০ লাখ টাকাসহ বিকাশের বাগেরহাটের মংলা জোনাল এজেন্ট (দক্ষিণ) মেসার্স লাক্ষী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক শাহিন আহত অবস্থায় আটকের খবর এবং চিকিৎসার ঘটনা ব্যাখা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ রবিবার সকালে বলেন, শনিবার সকালে শাহিনকে পাওয়া গেছে বলে পুলিশের কাছ থেকে খবর আসে। দুপুরের দিকে কুমিল্লা থেকে বিজিবি মেজর দিদার পরিচয় দিয়ে একটি ফোন আসে বাগেরহাট পুলিশের কাছে। ফোনে তিনি বলেন, শাহিনকে পাওয়া গেছে। তিনি কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের কাছে পালাতে গিয়ে একটি প্রাইভেটকার ও ট্রাকের সংঘর্ষে আহত হয়েছে। পরে বিজিবি তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপতালে ভর্তি করেছে। তাকে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন। এরজন্য টাকারও প্রয়োজন।
হারুন অর রশিদ আরও জানান, এরপর বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশের মাধ্যমে তাকে এই ০১৮৬৪৬৭৬৮৩১ নম্বরে শনিবার দুপুর ২টার দিকে প্রথমে ১২ হাজার টাকা, আধা ঘণ্টা পরে আরও ৭ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। বিকাশের মাধ্যমে ওই নাম্বারটিতে ১৯ হাজার টাকা দেওয়ার পর আর নম্বরটি খোলা পাওয়া যায়নি।
পরে সন্ধ্যায় পুলিশ জানতে পারে খবরটি ভূয়া। পুলিশ প্রতারক চক্রের হাতে প্রতারিত হয়েছে। আর পুলিশের দেয়া এই খবর সত্য মনে করে সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়ে বাগেরহাটের সংবাদকর্মীরা ঝামেলায় পড়েন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আজম জানান, পুলিশ প্রতারিত হয়েছে।
শাহিনকে পাওয়া গেছে বলে কুমিল্লা থেকে বিজিবি মেজর দিদার পরিচয় দিয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও মংলা থানায় খবর আসে। এরপর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলের (কুমিল্লার) উদ্দেশে বাগেরহাট থেকে পুলিশের এটি দল পাঠান হয়। কিন্তু খবরটি সম্পূর্ণ ভূয়া বলে পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়। তাই ওই দলটি পরে ফিরে আসে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের রাহাতের মোড়ে ব্রাক ব্যাংক বাগেরহাট শাখা থেকে ৬০ লাখ উত্তোলনের পর টাকাসহ বিকাশের (বাগেরহাট দক্ষিণ) জোনাল এজেন্ট মেসার্স লাক্সমি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যাবস্থাপক শাহিন নিখোঁজ হন।
পরে মেসার্স লাক্ষী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ এ ব্যাপারে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় ব্যবস্থাপক শাহিনসহ অজ্ঞাত কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
শাহীন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুঁটিখালী ইউনিয়নের ভাটখালী গ্রামের সুলতান হাওলাদারের ছেলে।