ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের। দেশটির চেশায়ারের একজন নারী তার শিশুকন্যাকে জন্মের পর থেকে তিন বছর ধরে ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
শিশুটির প্রতি ‘চরম অবহেল’ এবং পৈশাচিক ব্যবহারের জন্য ওই নিষ্ঠুর মায়ের সাত বছর ছয় মাসের জেল হয়েছে।
মামলাটির শুনানি হয় যুক্তরাজ্যের চেস্টার ক্রাউন কোর্টে।
চরম অবহেলা এবং নির্যাতনের পরিণতি হিসেবে শিশুটি এখন শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতবিক্ষত। চেশায়ারের বাড়িতে তৃতীয় জন্মদিনের কয়েক সপ্তাহ আগে শিশুকন্যাকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন সে রীতিমতো অপুষ্টিতে ভুগছে। শরীর প্রায় পানিশূন্য। গুরুতর বিকাশগত সমস্যায় জর্জরিত ছিল সে। তার গোটা ত্বক ফুসকুড়িতে আবৃত ছিল এবং সারা শরীরে অবহেলার চিহ্ন ছিল স্পষ্ট।
বিচারক স্টিভেন এভারেট বলেন, শিশুটির মা তাকে যথাযথ স্নেহ, মনোযোগ, সঠিক ডায়েট, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে দুধযুক্ত উইটাবিক্স খাওয়ানো হতো তাকে। শিশুটির তালু ফেটে গেলেও তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদান করা হয়নি। শিশুটি একটু যত্নের প্রত্যাশায় ক্ষুধার্ত ছিল। আদালতকে বলা হয়েছিল যে, মা শিশুটিকে তার ভাইবোনদের কাছ থেকে লুকাতে বিছানার ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তার সঙ্গীর কাছ থেকে গোপন করতে চেয়েছিলেন যিনি প্রায়শই বাড়িতে থাকতেন। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়। সত্যটি সামনে আসে যখন ওই নারীর সঙ্গী একদিন সকালে হঠাৎ করে বাড়ি ফিরে এসে শোবার ঘর থেকে শিশুর আওয়াজ শুনতে পান। খোঁজ চালানোর পর তিনি শিশুটিকে খুঁজে পান এবং স্বজনদের খবর দেন।
ওই নিষ্ঠুর মাকে সাজা দিতে গিয়ে বিচারক স্টিভেন এভারেট তার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, “আপনি যা করেছেন তা বিশ্বাস করাও কঠিন। আপনি ছোট্ট মেয়েটিকে ভালবাসা, যত্ন, খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা ছাড়া যেভাবে রেখেছিলেন তার পরিণতি বিপর্যয়কর হতে পারতো। শিশুটি এখন জীবিত থেকেও মৃত।”
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্ত ওই নারী দাবি করেন, তিনি জানতেন না তিনি গর্ভবতী ছিলেন এবং সন্তান জন্মাবার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি অফিসারদের বলেছিলেন, শিশুটি ‘পরিবারের অংশ নয়’। শিশুটিকে তার পিতার কাছ থেকে দূরে রাখতেই তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেন। ওই শিশুকে এখন ফস্টার কেয়ারে রাখা হয়েছে। এক বিবৃতিতে, তার তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, শিশুটি নিজের নাম পর্যন্ত এখনও বুঝতে শেখেনি সে। প্রসিকিউটররা আশা প্রকাশ করেছেন, মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠবে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
বিচারক স্টিভেন এভারেট জানিয়েছেন “আমার ৪৬ বছরে এতো খারাপ মামলা আর দেখিনি।” সূত্র: সিএনএন, বিবিসি, গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ