ইতিহাসে তিনি পরিচিত ‘ওয়াল স্ট্রিটের রানি’ নামে। মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল তাক লাগানোর মতো। ১৯১৬ সালে তার যা সম্পত্তি ছিল, আজকের দিনে তার মূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি। হেটি গ্রিন সেই সময়ে ছিলেন আমেরিকার অন্যতম ধনী নারী।
বিপুল সম্পত্তির মালিকানা হাতে থাকলেও তার জীবনযাত্রা নিয়ে কম চর্চা হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে ধনী নারী যিনি কার্পণ্যের জন্য সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন।
বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েও অত্যন্ত নিম্নমানের জীবনযাপন করতেন হেটি। পরতেন ছেড়া, নোংরা পোশাক। প্রতি দিনের খাবারের জন্য ব্যয় করতেন সামান্যই। নিউইয়র্কে তিনি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন।
কর দেওয়ার ভয়ে তিনি বাড়ি কেনেননি। সস্তা বাড়ি খুঁজে খুঁজে তিনি সেখানে বসবাস করতেন। কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি প্রায়ই বাড়ি বদলাতেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।
কথিত আছে, ১৬ বছর বয়সে কেনা অন্তর্বাস সেলাই করে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন হেটি। তিনি যে কালো পোশাকটি পরতেন, তা পুরোপুরি জীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন করেননি। এই সব কারণে তাকে আড়ালে ‘কালো ডাইনি’ নামে ডাকা হত।
১৮৩৫ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন হেটি। তিনি এক সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের একমাত্র কন্যা ছিলেন। তিনি তার পিতার থেকে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।
যখন তার ২১ বছর বয়স, তখন তিনি সেই টাকা ওয়াল স্ট্রিটে বিনিয়োগ করার জন্য নিউইয়র্কে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই সময়েই হেটির আয় ছিল ঘণ্টায় ৩০০ ডলার।
তার বাবা ও দাদার তত্ত্বাবধানে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে হাতেখড়ি হয় হেটির। ১৮৬৭ সালের জুলাই মাসে কোটিপতি এডওয়ার্ড এইচ গ্রিনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে বিয়ের পর হেটি ও তার স্বামীর দু’জনের সম্পত্তি পৃথক ভাবেই রাখা হয়েছিল।
কয়েক দিনের মধ্যে পুরুষপ্রধান ওয়াল স্ট্রিটের বাণিজ্যের রাশ নিজের হাতে নিয়ে ফেলেন হেটি। তিনি ওয়াল স্ট্রিটের অন্যতম পরিচালক হয়ে ওঠেন অল্প সময়ের মধ্যেই। সেই সময় আমেরিকার প্রায় প্রত্যেকটা রেলপথে তার অংশীদারি ছিল। রেলপথের মালকিন হলেও রেলগাড়িতে ভ্রমণের সময় সাধারণ কামরাই পছন্দ ছিল তাঁর।
এ ছাড়া অন্যান্য স্টক এবং সরকারি বন্ডেও যথেষ্ট আধিপত্য ছিল তার। ঋণ দেওয়ার জন্য মোটা তহবিল তৈরি করেন হেটি। বহু বিনিয়োগকারীকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
বন্ধকী এবং রিয়্যাল এস্টেটেও প্রচুর বিনিয়োগ করেছিলেন হেটি। যার ফলে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা লাভবান হয়েছিলেন।
বিপুল অর্থের মালিকানা সত্ত্বেও তিনি নিজের সন্তানের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে চাননি বলে কানাঘুষো শোনা যায়। সমালোচকদের দাবি, হেটির কার্পণ্যের জন্য তার ছেলের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ছেলেটির পা ভেঙে গেলেও চিকিৎসা না করিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসার খোঁজ করছিলেন হেটি।
সারা জীবন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করলেও তার শেষ জীবনের বেশির ভাগ সময় নিউ জার্সির হোবোকেনে একটি ছোট আবাসনে বসবাস করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল