অ্যান্টার্কটিকার শীতকালীন সমুদ্রবরফ ২০২৫ সালে গত ৪৭ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ বছর ১৭ সেপ্টেম্বর বরফের বিস্তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৭.৮১ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ শুরুর পর থেকে এটি তৃতীয় সর্বনিম্ন। ২০২৩ সালে সর্বকালের সর্বনিম্ন এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন মাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
প্রতি বছর দক্ষিণ গোলার্ধের শীতে অ্যান্টার্কটিকার চারপাশের সমুদ্র জমে যায়। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বরফের বিস্তার সর্বোচ্চ হয় এবং তারপর গলতে শুরু করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ প্রবণতায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডাটা সেন্টারের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত বরফের পরিমাণ কিছুটা ওঠানামা করলেও সামগ্রিকভাবে ধীরে ধীরে বাড়ছিল। কিন্তু এখন বিশ্ব সমুদ্রের উষ্ণতা অ্যান্টার্কটিকার কাছাকাছি পানিতে মিশে যাচ্ছে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি দক্ষিণ মেরুতেও পৌঁছে গেছে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, ভাসমান সমুদ্রবরফ গললে সমুদ্রপৃষ্ঠ সরাসরি না বাড়লেও এর অন্য প্রভাব আছে। বরফ গলে গেলে সাদা পৃষ্ঠের জায়গায় গভীর নীল পানি তৈরি হয়। সাদা বরফ সূর্যের আলো মহাশূন্যে প্রতিফলিত করে, কিন্তু নীল পানি সেই তাপ শোষণ করে নেয়। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও বেড়ে যায়।
এ ছাড়া সমুদ্রবরফ ঢেউ ও বাতাসের প্রভাব কমিয়ে উপকূলকে সুরক্ষা দেয়। বরফ কমে গেলে এই সুরক্ষা দুর্বল হয় এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তর ভেঙে সমুদ্রে পড়তে শুরু করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াতে পারে।
তবে আরেকটি বিপরীত প্রভাবও দেখা যেতে পারে। সমুদ্রের আর্দ্রতা বাড়লে অ্যান্টার্কটিকায় তুষারপাতও বেড়ে যেতে পারে। এতে সাময়িকভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়ার প্রভাব কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ইতিহাস বলছে—তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বরফস্তর ছোট হতে থাকে।
অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরে পর্যাপ্ত বরফ আছে, যা পুরোপুরি গলে গেলে বিশ্বের উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল ডুবে যেতে পারে। যদিও এই পরিবর্তন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘটবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশ শোষণ করছে সমুদ্র। এর প্রভাবই ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে অ্যান্টার্কটিকার বরফে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল