দীর্ঘ ৮ বছর পরে ঝালকাঠির চাঞ্চল্যকর পিপি এ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন হত্যা মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১ টায় ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল হালিম দ:বি: ৩০২ ও ৩৪ ধারায় ৫ আসামীর মধ্যে ৩ জনের উপস্থিতিতে রায় ঘোষনা করেন। রায়ে ৫ আসামীর সবাইকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এরা সকলে জেএমবি'র সক্রিয় সদস্য এবং জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ট সহযোগী।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত জেএমবির ৫ ক্যাডার বরগুনা জেলার তালতলা গ্রামের শফিজ উদ্দীনের পুত্র মো. বেলস্নাল হোসেন (২৭), বরগুনার আ. রহিম আকন্দের পুত্র আবু শাহাদাৎ মো: তানভীর (২৮), খুলনার টুটপাড়া এলাকার মোশারেফ হোসেনের পুত্র মুরাদ হোসেন(২৯), ঢাকার উত্তরখান থানার উজামপুর গ্রামের মো. সামসুদ্দিনের পুত্র ছগির হোসেন ও রাজশাহীর মো. বশির উদ্দীনের পুত্র আমিনুল ওরফে আমীর হোসেন (৩২)এদের মধ্যে বেল্লাল ও সগির পলাতক রয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে আসামীরা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
মামলায় সরকার পক্ষে অতিরিক্ত পিপি এম আলম খান কামাল, এ্যডভোকেট মঞ্জুর হোসেন পলাতক আসামীদের পক্ষে ও গ্রেফতার আসামীদের পক্ষে একেএম লুৎফর রহমান আদালতে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন।
মামলার বিবরনে জানাযায়, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল পৌনে ৯ টায় জেএমবির বোমায় ঝালকাঠি আদালতের বিচারক সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাড়ে নিহত হয়। এ মামলায় সরকার পড়্গে মামলা পরিচালনা করেন পিপি এ্যাড. হায়দার হোসাইন। আদালতে জেএমবির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পিপি হায়দার হোসাইন কোরআন-হাদীস এবং তথ্য-উপাত্তের আলোকে তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করেন। ২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমদ ৭ জঙ্গীকে ফাসির আদেশ দেন।
জেএমবি প্রধান শায়খ আঃ রহমান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ৭ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২১ মার্চ। শায়েখ আ: রহমানসহ জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ার ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হায়দার হোসাইনকে গুলি করে হত্যাকরে জেএমবির ক্যাডাররা।
দুই বিচারক হত্যা মামলার সরকার পক্ষের কৌশলী অ্যাড. হায়াদর হোসাইকে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় কবরস্থান জামে মসজিদ থেকে নামাজ আদায় শেষে বের হওয়ার সংগে সংগে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে তার ছেলে তারিক ইবনে হায়দার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে পরেরদিন ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করেন। কয়েক দফা তদন্তের পরে পুলিশের অপরাধ তদনত্ম বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক মোশারেফ হোসেন হত্যা ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি জেএমবির পাঁচ ক্যাডার বরগুনার বেল্লাল হোসেন (পলাতক), আবু শাহাদাৎ মো: তানভীর, খুলনার মুরাদ হোসেন, ঢাকার ছগির হোসেন (পলাতক) ও আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ঐ বছরের ১৫ ডিসেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে চাজ গঠন সম্পন্ন হয়। আদালত ৫৬ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে এ রায় ঘোষনা করেন।
চার্জসিট হওয়ার পরে মামলাটি বরিশাল দ্রুত বিচার আদালতে বিচারের জন্য বদলি করা হয়। দুই জন স্বাক্ষী না থাকায় এবং দ্রুত বিচারের সময় অতিবাহিত হওয়ায় বিচারক সাকম অনিসুর রহমান মামলাটি পুনরায় জেলা জজ আদালতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। জেলা জজ মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করে।
ঝালকাঠি জজ শীপের দু বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে এবং শহিদ সোহেল আহমেদ চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান সহ শীর্ষ ৬ জঙ্গীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয় বলে আসামীরা তাদের জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন।
মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাদি তারেক জানান দীর্ঘ দিন পরে হলেও বিচার পেয়েছি। তবে তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করারা দাবি জানান।
তবে উপস্থিত আসামীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছে তারা জীবন কখনও ঝালকাঠি আসেননি। ৩জনই নিজেদেরকে নির্দোষ বলে দাবী করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ ফেব্রুয়ারি ১৫/ সালাহ উদ্দীন