বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিভীষিকাময় ও দুঃসহ এক স্মৃতি ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিল। আজ থেকে ২৪ বছর আগে ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকুলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। যার আঘাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ লাখ মানুষ। যদিও সরকারি হিসেবে এ সংখ্যা দেড় লাখের মতো। ঘূর্ণিঝড়ের পর এক মাসের মধ্যে এর প্রভাবে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরো লক্ষাধিক মানুষ। সেদিনের ভয়ঙ্কর সেই তাণ্ডবে শুধু মানুষই নয়, লাখ লাখ গবাদি পশু, ফসল, বিপুল পরিমাণ স্থাপনা ও সম্পদ ধ্বংস হয়।
আকস্মিক সেই ঘূর্ণিঝড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল লাশ আর লাশ। উপকূল পড়েছিল লাশের মিছিল। সেইসঙ্গে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। নিহতদের স্বজনরা সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা আজও ভুলতে পারেনি। প্রলংয়কারী ওই ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালী। ওই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেখানকার অধিবাসীরা। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব উপকুলীয় অঞ্চল কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশালসহ ১৩টি জেলার ৭৪টি উপজেলার দেড় কোটি মানুষ ওই ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবের শিকার হয়।
২৯ এপ্রিল রাতে পূর্ণিমার ভরা জোয়ার থাকায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত হয়ে উঠেছিল আরো সর্বগ্রাসী ও প্রাণহানিকর। ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু সাইক্লোনের আঘাত কেড়ে নেয় ৫ লাখ মানুষের জীবন। যাদের চার ভাগের তিন ভাগই ছিল শিশু ও নারী। এদিকে উপকূলজুড়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ২৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো সেই উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। বেড়িবাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মধ্যে চরম আতঙ্কে বাস করছে সেখানকার মানুষ। এখনো প্রতি বর্ষায় নির্ঘুম রাত কাটান তারা। জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ এপ্রিল, ২০১৫ / রোকেয়া।