প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি করে গিয়েছিলেন। এই চুক্তি বাস্তবায়নে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী এনেছিলেন। কিন্তু এতোদিন ভারত তাদের সংবিধান সংশোধনী না করায় চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত ৭ মে ভারত সংবিধান সংশোধন ও আইন পাশ করায় স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ও করেছি। এখন আমরা নদী সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ভারতের ৫৪টি নদী বাংলাদেশে এসে সংযুক্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে যে সমস্যা বিরাজমান রয়েছে তার সমাধানের ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরবর্তী জিয়া, এরশাদ, খালেদা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেউই এ উদ্যোগ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সবসময় দেশ ও মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বলেই তারা এসব সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ব্রিটেনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে একঘণ্টার যাত্রাবিরতিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি একথা বলেন। সকাল ১০টা ৯ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি (বিজি-০১৬, বোয়িং-৭৭৭) ওসমানীতে অবতরণ করে। যাত্রাবিরতি শেষে সকাল ১১টা ৯ মিনিটে বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ওসমানী ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন তা নয়, স্বাধীনতা অর্জন, অর্জন পরবর্তী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কিভাবে তৈরি হবে, কোথায় কি কি কাজ করতে হবে সবকিছুর পরিকল্পনা করে গেছেন। শুধু বাস্তবায়ন করাটাই বাকি ছিল। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ও উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। সেই নীতিতে আমরা অবিচল থেকেই একেক করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পেরেছি। প্রতিবেশী চারটি রাষ্ট্রের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সিলেটের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সিলেটে শুধু বিল্ডিং পরিবর্তন করে নামকরণের উন্নয়ন করা হয়েছে। কোন মৌলিক উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা, রেলস্টেশন আধুনিকায়ন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উন্নয়ন, সিলেটে পূর্ণাঙ্গ সেনানীবাস করাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেটকে একটি সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত করতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সিলেটে সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে হবে। দলে কোন রকমের অনৈক্য থাকা চলবে না। সবাইকে একজোট হয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার ব্যাপারেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সর্তক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের বিচার করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ব্রিটেন পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর বিজয়ের জন্য সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন- টিউলিপের নির্বাচনে প্রবাসী সিলেটীরা অনেক কষ্ট করেছেন। তাদের সমর্থন ও সহযোগিতায় টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার হতে পেরেছে। এজন্য টিউলিপও সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। এটার দাবিদার আপনারা সকলেই, প্রবাসী বাংলাদেশী থেকে শুরু করে প্রত্যেকে এতে অবদান রেখেছেন।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আশফাক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ জুন, ২০১৫/ রশিদা