যুগ্ম-সচিবের কক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রনালয়, সচিবালয় ক্যান্টিনসহ সর্বত্র সোমবারের আলাপের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রবিবারের এ ঘটনাটি। আজ সরেজমিন সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে বিষয়টি নজরে এসেছে। এ সময় অনেক কর্মকর্তা জয়ের ক্ষমতার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের সরকারি অফিস ভাঙচুর করার ঘটনা অফিসিয়ালি না জানলেও মৌখিকভাবে তাকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেছেন, উপমন্ত্রী জয়ের বিষয়টি মন্ত্রিপরিদ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সচিব।
গত রবিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে নিজের নাম না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বেরিয়ে যান অনুষ্ঠানস্থল থেকে। পরে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভাঙচুর করেন যুগ্ম-সচিবের দফতরে। তালা লাগিয়ে দেন একজন সিনিয়র সহকারী সচিবের দফতরে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রণালয়ে ফিরে এ ঘটনা শুনে ও দেখে হতভম্ব হয়ে যান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেছেন, সচিবালয়ে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এ ঘটনা খুবই লজ্জার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল ছিল জাতীয় যুব দিবস। এ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে আয়োজন করা হয় আলোচনা অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর। রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রতিবারই প্রধান অতিথি থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এবারের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী না থাকায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। সঙ্গত কারণেই অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধান অতিথির নাম লেখা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতিসহ অন্যরা ছিলেন বিশেষ অতিথি। কিন্তু ব্যানারে তাদের কারও নাম ছিল না। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপমন্ত্রী ব্যানারে তার নাম না দেখে অনুষ্ঠান শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় সচিব নূর মোহাম্মদ উপমন্ত্রীকে বুঝিয়ে আবার অনুষ্ঠানস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। পরে অনুষ্ঠানের ঘোষক যখন পুরস্কার বিতরণের ঘোষণা দেন তখন আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে যান উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। জানা গেছে, ঘোষক প্রধান অতিথির কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার জন্য ঘোষণা দিলে উপমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে সোজা সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে অবস্থিত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে চলে আসেন জয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ে ফিরে জয় যুগ্ম-সচিব মাসুক মিয়ার ৫০১ নম্বর কক্ষে ঢুকে তার কম্পিউটার ও ফাইলপত্র ছুড়ে ফেলেন। এরপর তিনি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব গোলাম কবীরের কক্ষে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় এই দুই কর্মকর্তা ছিলেন ওসমানী মিলনায়তনের অনুষ্ঠানস্থলে।
যুগ্ম সচিবের কক্ষে ভাঙচুরের বিষয়টি নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সোমবারও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে থমথমে পরিস্থিতি দেখা যায়। তবে এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ-সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কানে গিয়েছে। তিনি বলেন, যুব অনুষ্ঠানের ব্যানারে উপমন্ত্রীর নাম থাকা উচিত ছিল। তবে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জয়ের প্রতিবাদের ভাষা ঠিক ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ সোমবার রমনায় আয়োজিত যুব মেলায় উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় যোগ দেননি বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/০২ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ