২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:২২

ফখরুল ছাড়া আরও ৪ জন শপথের অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফখরুল ছাড়া আরও ৪ জন শপথের অপেক্ষায়

অবশেষে জাতীয় সংসদে যোগ দিতদ আওয়ামী লীগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে যোগ দেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ ভবনে নিজ দফতরে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। 

পরে সাংবাদিকদের জাহিদুর জানান, জনগণের চাপে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিতে বাধ্য হয়েছেন। দল যে কেনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি বহিষ্কার হবো না। কারণ দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আমি এই দলের সঙ্গে আছি। আমি এই দলের একজন নিবেদিত কর্মী। আর এই শপথের মাধ্যমে অবশেষে সংসদে ঠাঁই পেল নৌকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক।

জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরো পাঁচ জন সদস্যের মধ্যে চারজনই শপথ নিতে পারেন। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে স্পিকার চাইলে নির্ধারিত ৩০ কার্যদিবসের বাইরেও শর্ত সাপেক্ষে তারা শপথ নিতে পারবেন। বিষয়টি নির্ভর করবে সরকারি দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর। 

বিএনপি সূত্র জানায়, বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ নেয়ার সম্ভাবনা নেই। এদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ গ্রহণকারীদের ‘গণদুশমন’ বলে আখ্যায়িত করেন। 

তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে জনগণই দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নেয়াতে বহিষ্কার হতে পারেন কী না? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নতুন শপথ নেয়া এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, আমার বিষয়ে দল যেন কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। সেটা জেনেশুনেই শপথগ্রহণ করেছি। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে, করতেই পরে। বহিষ্কার করলেও কিন্তু আমি দলে আছি। সেই ছাত্রজীবন থেকে এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হবো না। আমি আছি। 

তিনি আরও বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তাদের প্রত্যাশা আমি যেন শপথগ্রহণ করে এলাকা ও দেশের সম্পর্কে ভূমিকা পালন করতে পারি।

এর আগেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ীদের মধ্যে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নিয়েছেন। এবার শপথ নিলেন বিএনপির জাহিদুর রহমান। এর মাধ্যমে এবারের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যনারে বিজয়ী ৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে তিনজন শপথ নিলেন। তবে শুরু থেকেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত ছিল যে, তাদের কেউ শপথ নেবেন না।

শপথ গ্রহণ শেষে এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, এই শপথ দলের সিদ্ধান্তের বাইরেই। আমি দীর্ঘদিন তো অপেক্ষা করলাম। যেহেতু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, এলাকার মানুষের প্রচণ্ড চাপ ছিল। গত ১৫ দিন ধরে ঢাকায় আছি। এলাকার মানুষের একটাই বক্তব্য, শপথ নিয়ে ফিরে আসেন।

শপথ গ্রহণের আগে দলের কোনো পর্যায়ে কথা হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আগে বলেছি। দেখাও করেছি। কোনো প্রকার সম্মতি দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত শপথ নেবে না। এখনো পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাঠে লড়াই করেছি। আমি এবার নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন করলাম। এই আসনটি আমাদের বিএনপির ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের ছিল। এই প্রথম বিএনপি বিজয়ী হয়েছে সেখানে। 

তিনি আরও বলেন, আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী, ৭৩ বছর বয়স তার। উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেওয়া হয়, সংসদে আমি এই আহ্বান জানাব। এটাই আমার সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম অঙ্গীকার। আর এলাকার হাজার হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান করব। বলব, আপনি এগুলো দেখেন। এগুলোর বাদী পুলিশ। পুলিশ যা করেছে সব মিথ্যা মামলা করেছে। আপনার লোক কোনো মামলা করেনি। এটা দেখা উচিত। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাবো আমি।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর