২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:৫৯

দেশে যেসব কারণে বাড়ে চাল, পিয়াজ, আলুর দাম: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক

দেশে যেসব কারণে বাড়ে চাল, পিয়াজ, আলুর দাম: গবেষণা

ফাইল ছবি

দেশে চাল, আলু ও পিয়াজের দাম বাড়ার কারণ কী? এক গবেষণায় সেই উত্তর উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে চাল, আলু, পিয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা: একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা’ প্রতিবেদনটি আজ প্রকাশ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এক কর্মশালায় এ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিএআরসির বাস্তবায়নে ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে চাল, আলু ও পিয়াজ ইত্যাদির দাম বাড়ার কারণ উদঘাটনের জন্য তিনটি স্টাডি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ধান/চাল বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে নওগাঁ, শেরপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলা, আলুর ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও ঢাকা জেলা এবং পিয়াজের ক্ষেত্রে ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় জরিপ চালানো হয়।
  
বাংলাদেশে চাল, আলু ও পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনে বিএআরসি উপস্থাপিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চালের দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ হলো: প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্ত বিক্রি করে দেন। গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরনটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করেছিলেন এবং মজুদ ধরে রেখেছিলেন।

আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারণ হলো- ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুদ করা। হিমাগারে মজুদ করা আলুর রশিদ পুনঃপুন হস্তান্তর। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে আলু রফতানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আলুর বিপুল মজুত ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা। বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘতর হওয়ায় সবজির উৎপাদন হ্রাস ও আলুর চাহিদা বৃদ্ধি। হিমাগারে আলুর সংরক্ষণের পরিমাণ কম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক আলুর বিতরণ অপ্রতুলসহ প্রভৃতি কারণ রয়েছে।

পিয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কারণ হলো- দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারে কারসাজি ও ভারতীয় রফতানি নিষেধাজ্ঞা অথবা অতিমাত্রায় ভারতের ওপর পিয়াজে আমদানির জন্য নির্ভরতা অন্যতম কারণ।

গবেষণায় চাল, আলু ও পিয়াজের দাম বৃদ্ধিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। 

চালের ক্ষেত্রে সুপারিশ 

ধান/চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা। মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিণত করা। চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করা। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা। মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা, যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আলুর ক্ষেত্রে সুপারিশ 

হিমাগারে আলুর সংরক্ষণ ও আবমুক্তকরণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা। আলুর বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। সরকার কর্তৃক আলুর উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা এবং তা হালনাগাদ রাখা। সরকারিভাবে আলুর মজুদ গড়ে তোলা। 

পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি রোধে সুপারিশ 

সংকটকালীন সময়ে পিয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত একাধিক রফতানিকারক মুখোমুখি করা। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করা। কৃষিমূল্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে সারা বছর বাজারে পিয়াজের দাম নির্ধারণ ও তদারকি করা। বাজারে পিয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও মজুতের অগ্রিম ব্যবস্থাপনা। সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেওয়া। 

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চাল, পিয়াজ ও আলু— এই তিনটির দাম বেশি ছিল। সরকার দাম কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়। চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর