ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি রাজ কলেজ সফরে গেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে সড়ক পথে নিজেই গাড়ি চালিয়ে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে পৌঁছন তিনি। কান্দির রাজ কলেজ পরিদর্শন ও সেখানে দীর্ঘ সময় কাটান শাহরিয়ার আলম। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানান কলেজের অধ্যক্ষা ড. সোমা দত্ত সহ অন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।
কলেজ প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদ আবুল, বরকতের আবক্ষ মূর্তি এবং অমর একুশে ও স্মৃতি সৌধতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় শাহরিয়ার আলমের সাথে ছিলেন তার পিতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন সহ নিকট কয়েকজন।
পরে তিনি গণমাধ্যমের কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। শাহরিয়ার আলম বলেন ‘বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং অনেক বেশি বিশ্বাসের ও গভীরের। এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়, যখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, গোটা ভারতের মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আশ্রয় দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।’
তিনি আরও বলেন ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যেকার সম্পর্ক খুবই ভাল এবং দুই দেশের মধ্যে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা থাকবে কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার সাথে আমরা সেগুলোর সমাধান করে চলেছি।’
তার অভিমত, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি কমন শত্রু আছে তা হল দারিদ্রতা। এটি দূরীকরণে আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি এবং দুই দেশই অনেক দূর এগিয়েছে। সামনের পথগুলোতেও আমরা এভাবে এগিয়ে যেতে চাই এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।’ করোনাকালের সঙ্কটময় সময় কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছি বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
কলেজ পরিদর্শনের পর ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী কান্দির কৃতি নারী শিক্ষার্থী রুমানা সুলতানার বাড়িতে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করেন শাহরিয়ার আলম ও তার পিতা। সেখানে রুমানা সুলতানাকে মিষ্টি মুখ করান শাহরিয়ার আলম। এছাড়াও একটি জ্যাকেট সুলতানার হাতে তুলে দেন তার পিতা। সংবর্ধনা জানানোর পাশাপাশি তার পরিবারের হাতে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তুলে দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এনিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলার সাথে আমাদের পরিবারের আত্মার সম্পর্ক, পরিবারকে সাথে করে নিয়ে আশার খুব ইচ্ছা ছিল। তাছাড়া বাবার ইচ্ছা ছিল যে কান্দির কৃতী ছাত্রী রুমানা সুলতানাকে সংবর্ধনা দেওয়া- তাই সব মিলিয়ে এখানে আসা।’
অন্যদিকে রুমানা জানান, ‘মন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি সেই কথা রেখেছেন। তাছাড়া জ্যাকেট, মিষ্টিসহ আরও বেশ কিছু উপহার সামগ্রী আমাকে দিয়েছেন। মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে আমি খুব খুশি ও আনন্দিত।’
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আগামী ১১ ডিসেম্বর কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শাহরিয়ার আলম। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং কলকাতা ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’এর যৌথ সহযোগিতায় মেজর (অব:) এ.এস.এম.শামসুল আরেফিন কর্তৃক সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ @৫০’ এবং সত্যম রায় চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু ফর ইউ’ শীর্ষক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের কারিগরী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হুমায়ূন কবীর, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’এর সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস ঘোষ, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিষ সূর প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ