“আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং দিবস ২০২২” উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ-এর আয়োজনে ইউল্যাবের গবেষণা ভবনে “বাংলাদেশে ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ” শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এএফপি বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাসমূহ যথা, এএফপি ফ্যাক্টচেক বাংলা, বুম বাংলাদেশ, রিউমার স্ক্যানার এবং ফ্যাক্টওয়াচ- এর ফ্যাক্ট-চেকারগণ, সাংবাদিকবৃন্দ, উন্নয়নকর্মী এবং বরেণ্য শিক্ষাবিদেরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউল্যাব-এর উপাচার্য প্রফেসর ইমরান রহমান তার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। তিনি সংবাদের নির্ভরযোগ্যতা ও সত্যতা নিশ্চিত করা, এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শফিকুল আলম তার বক্তব্যে মূলধারার গণমাধ্যম এবং অনলাইন গণমাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ার (প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন) মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যের বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেন এবং এটি কীভাবে দেশের মানুষের জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রতিটি সংবাদ সংস্থার সত্যতা এবং স্বচ্ছতার স্তর বজায় রাখার জন্য একটি নিবেদিত ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগ থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
পরবর্তীতে ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, প্রখ্যাত লেখক, কলামিস্ট এবং গবেষক সুদীপ চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের বক্তব্যের পর বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোয়া ফ্যাক্ট-চেকারদের নিয়ে একটি প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করা হয়। প্যানেল ডিসকাশনটি পরিচালনা করেন ফ্যাক্টওয়াচ টিমের ফ্যাক্ট-চেকার আপন দাস। উক্ত প্যানেলে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এএফপি বাংলা ফ্যাক্ট চেকের সম্পাদক কদরউদ্দিন শিশির, রিউমার স্ক্যানারের প্রধান উপদেষ্টা জাওয়াদ বিন হাফিজ, বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকার মিনহাজ আমান এবং ফ্যাক্টওয়াচ-এর ফ্যাক্ট চেকার শুভাশিস দীপ।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলোতে ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগ শুরু করার সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ, ফ্যাক্ট-চেকিং এবং মিডিয়া সাক্ষরতার বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করা, তথ্য যাচাইয়ের বর্তমান প্রযুক্তিগত এবং পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নির্ভরযোগ্যতা, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্যানেলিস্টগণ পর্যায়ক্রমে আলোচনা করেন। অতঃপর একটি প্রশ্ন/উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে শ্রোতা সদস্যরা প্যানেলিস্টদের কাছে তাদের প্রশ্ন তুলে ধরেন। এ পর্বে কীভাবে সংবাদ সংস্থাগুলি নির্ভুল খবর প্রচার করতে পারে, কীভাবে মিডিয়া হাউজগুলো তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব এবং পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার সাথে একযোগে কাজ করতে পারে, এবং প্রতিটি সংবাদ সংস্থায় একটি নিজস্ব ফ্যাক্ট চেকিং বিভাগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
পরিশেষে, ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অধ্যাপক সুমন রহমান তার ধন্যবাদ-জ্ঞাপন বক্তব্যে ফ্যাক্ট-চেকারদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ফ্যাক্ট-চেকাররা কেবল একে অপরকে সহায়তা করবে এমনটি নয়, বরং সেই সাথে কাজের একটি নির্দিষ্ট মান সর্বদা বজায় রাখা ও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ক্রমবর্ধমান সমস্যাসমূহ সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকারবৃন্দ এক যোগে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।