অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলার পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)-কে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)। শুক্রবারের মতো শনিবারও অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের খোঁজে অভিযান চালায় ইডির কর্মকর্তারা। অবশেষে একটি গোপন আস্তানা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ইডির কর্মকর্তারা।
এদিন প্রশান্তের ভাই প্রণব কুমার হালদারকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেককেই এদিন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির আঞ্চলিক দফতরে নিয়ে আসা হয়।
গ্রেফতারি প্রসঙ্গে প্রশান্ত হালদার কিছু না বললেও তার ভাই প্রণব জানান, ‘প্রশান্ত আমার ভাই। আমি মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে আসি।’ যদিও অর্থ পাচার বা আত্মসাতের বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি তিনি।’
ইডি সূত্রে খবর, প্রশান্ত হালদারসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ইডি। যার মধ্যে রয়েছেন পি কে হালদারের অন্য দুই সহযোগী স্বপন মৈত্র ও উত্তম মৈত্র নামে সম্পর্কে দুই ভাই। আদতে বাংলাদেশি হলেও দুই দেশের পাসপোর্টের অধিকারী এবং নাগরিকত্ব রয়েছে স্বপন ও উত্তমের।
জানা গেছে, বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি রুপির আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত হালদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয় বাংলাদেশে। এরপরই সেদেশ থেকে পালিয়ে নাম বদল করে শিবশঙ্কর হালদার নামে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছিলেন। ভারতেই রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড বানিয়েছিলেন। তবে প্রশান্তই নন, তার সহযোগীরাও ভারতে প্রবেশ করে স্থানীয় সব নথিই সংগ্রহ করেছে।
এব্যাপারে উত্তমের স্ত্রী রচনা মৈত্র শনিবার জানায়, ‘ইডির কর্মকর্তারাই স্বপন ও উত্তম নামে দুই ভাইকে আটক করে নিয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, ‘স্বপন পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। উত্তম তার ভাইকে সহায়তা করতেন।’ তিনি আরও জানান ‘আমি ডাক্তার দেখাতেই দেড় বছর আগে ভারতের কলকাতায় আসি। কিন্তু করোনার কারণে দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি।’
তিনি এও স্বীকার করেন, ‘বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও তার রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড- সবকিছুই আছে।’
শুক্রবারই দিনভর পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরসহ একাধিক জায়গায় পি.কে.হালদার ও তার সহযোগীদের সন্ধানে অভিযান চালায় (ইডি)। কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির সন্ধান মেলায় রাতেই পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী সুকুমার মৃধার অশোকনগরের ১৬২/৮ দক্ষিণ পল্লীর বাড়ি থেকে বেশ কিছু দলিল, বাংলাদেশি ফোন নাম্বার ও নথি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এরপর রাতেই বাড়িটিকে সিলগালা করে দেয় ইডি’র কর্মকর্তারা। সুকুমারের বাড়ির প্রধান ফটকে ইডি’র তরফে একটি নোটিশও টাঙিয়ে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’এর ১৭ ধারার ১এ উপধারায় তার সম্পত্তিও ফ্রিজ করার কথা বলা হয়।
শনিবার সকালে সেই খবর জানাজানি হতেই সুকুমারের বাড়ির বাইরে ভিড় জমান অনেক উৎসাহী মানুষ। বাইরে থেকে উঁকি মেরে অনেকেই ভিতরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করেন। তবে গোটা ঘটনাটি জেনে অনেকেই হতবাক হয়ে ওঠেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচুর অর্থের মালিক হওয়ায় জমিদারের মতো চলাফেরা করতো সুকুমার। স্বভাবতই কাজের খোঁজে বা কিছু পাওয়ার লোভে সুকুমারের পিছনে ঘুরতো স্থানীয় অনেকেই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এক বাসিন্দা বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী জানান, ‘সুকুমার মৃধা খুবই বিত্তশালী ব্যক্তি। তার প্রচুর অর্থ আছে এবং সেই ভাবেই সে চলাফেরা করত। জমিদারের মতো ঠাঁটবাট নিয়ে চলাফেরা করত সে। ফলে অনেক মানুষই তার পিছনে ঘুরঘুর করত।’
তিনি আরও জানান, ‘এলাকায় প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী সুকুমারের বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। কিন্তু কারোরই কোনো সন্দেহ হয়নি। তার কারণ অনেকেই বাংলাদেশ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে এসে এপার বাংলায় বাড়ি-ঘর তৈরি করেন। আমরাও তেমনটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন জানতে পারছি বাংলাদেশে কোটি কোটি রুপি আত্মসাতের সাথে জড়িত তারা।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল/ ফারজানা