ওয়াটারএইড আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে জলবায়ু এবং পানি খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা পানি এবং ওয়াটার স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিনের (ওয়াশ) ওপর জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সোনারগাঁও হোটেলে এই আয়োজনের মাধ্যমে ওয়াটারএইড আজ তাদের আসন্ন ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ ‘রেজিলিয়েন্ট ওয়াটার অ্যাক্সেলারেটর’র উদ্বোধন করেছে।
‘রোড টু কপ২৭’ এ বক্তারা বিশ্বের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মানব সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) প্রস্তাবিত পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (ওয়াশ) পরিষেবা সংক্রান্ত ‘লো-রিগ্রেটস’ অভিযোজন সমাধান (অ্যাডাপ্টেশন সল্যুশন) সমূহ প্রান্তিক ও সংকটাপন্ন সম্প্রদায়গুলোকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। ওয়াশ পরিষেবাগুলো জলবায়ুর প্রভাবজনিত সংকট হ্রাস করবে এবং সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষা, সমৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যগত বৈষম্যের ব্যবধান কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে, যা সকল সম্প্রদায় এবং ব্যক্তির সহনশীলতা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন।
তবে এই অভিযোজন সমাধানগুলোর জন্য প্রয়োজন অর্থায়ন, যা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত অপর্যাপ্ত। আইপিসিসি পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা দানকে জলবায়ুজনিত সংকট হ্রাস করার জন্য স্বল্প মেয়াদে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করে এবং একে লো-রিগ্রেটস অভিযোজন সমাধান হিসাবে চিহ্নিত করে। এই বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা যায় যে, ওয়াশ পরিষেবা বরাদ্দের প্রশ্নে এখনও উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বৈষম্য রয়ে গেছে, যেখানে উন্নত ও শহরাঞ্চলগুলো বিগত বছরগুলোতে গ্রাম, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং উপকূলীয় এলাকার তুলনায় বরাদ্দকৃত তহবিলের অধিকাংশ ভাগ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সেবা দানে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ওয়াশ-এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো সম্পর্কে আমাদের ধীরে ধীরে আলোচনার পথ তৈরি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি সাহসী এবং আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে এবং আমরা এক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা পালন করছি। প্রান্তিক জনগণের জীবনে জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর দিকে সকলকে মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পানির গুরুত্ব রোড টু কপ২৭ গোলটেবিল বৈঠকের ২০২২ মূল সুপারিশগুলো প্রস্তাব করা হয় :
১। নিশ্চিত করতে হবে যেন অভিযোজনের জন্য ধনী দেশগুলো তাদের পাবলিক ফাইন্যান্স ২০২৫ সালের মধ্যে ২০১৯ এর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করা হয়। হার্ড-টু-রিচ অঞ্চলের জন্য বর্ধিত বরাদ্দ এবং শহরের অভ্যন্তরীণ বরাদ্দ বৈষম্য দূর করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
২। কাঠামোগত বৈষম্যগুলো মোকাবিলা করতে হবে-বিশেষত যে সকল গোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।
৩। স্থায়ীত্বশীলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে, এমন পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ওয়াশ পরিষেবাগুলো নির্ভরযোগ্য রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক সংস্থান করতে হবে যাতে দুর্যোগের সময় এবং পরে তারা প্রয়োজনীয় পরিষেবা পায়।
৪। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন এবং সহনশীলতা তৈরির জন্য স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন (লোকালি-লেড এডাপটেশন) নীতিগুলোকে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে অবলম্বন করুন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই