রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘যেসব দেশ উন্নয়নের পথে রয়েছে তারা দুর্নীতি নিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ পারে নাই। এমনকি বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে সরকার রাগান্বিত হয়।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সোমবারের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরো অংশ নেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের মোতাহার হোসেন ও সেলিমা আহমাদ।
রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে এই সংসদে বহু আলোচনা হয়েছে। আমি তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। কারণ, এতে সরকার কেবল অস্বস্তিবোধ করেন না, রাগান্বিতও হন। এটা ঠিক যে এই সরকার শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু তার অর্থ এ নিয়ে কোনো জবাবদিহি চাওয়া যাবে না। সর্বশেষ গতকাল সরকার বিদ্যুৎ আইনের যে সংশোধনী এনেছেন তা এই ক্ষেত্রে জনগণের প্রশ্নের অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আর বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য গণশুনানির প্রয়োজন হবে না। সরকার চাইলেই যে কোনো সময় মূল্যবৃদ্ধি করতে পারবে। এমনিতেই বিইআরসি জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে মূল্যবৃদ্ধি করে আসছিল। এখন সরকারের এই একক ক্ষমতা সরকারকেই দায়িত্বহীন করে তুলবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুললেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থেকে সরকার পথচ্যুত হয় নাই। তবে অর্থনীতির প্রয়োজন মেটাতে আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে তাদের শর্ত পূরণ করতে পাবলিক ইউটিলিটি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিসহ যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে টেনে ধরছে। বিইআরসিকে এড়িয়ে সরকার কর্তৃক সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসের ৮২% মূল্যবৃদ্ধি শিল্পখাতকে গভীরভাবে আঘাত করবে সন্দেহ নেই। এই আঘাত শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপর এসে বর্তাবে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিখাতে মূল্য সমন্বয়ের নামে মূল্যবৃদ্ধি উপরতলার বড়লোকদের জন্য কিছু যায় আসে না। কিন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের ওপর এই আঘাত নিদারুণভাবে পড়ছে। এই অংশের মানুষ ইতোমধ্যেই তাদের সংসারের খরচ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার যদি এসব সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন তবে এসব মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাপনই দুঃসহ হয়ে পড়বে।’
মেনন আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংকটের কারণে সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। বাংলাদেশ এখনও এই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। তবে বাজারে যে নিদারুণ ডলার সংকট চলছে তার পরিণতি আমদানি খাতকে আঘাত করছে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী এলসির টাকা ব্যাংক পরিশোধ করতে না পারায় রমজানের জন্য আনা দুই জাহাজ পণ্যকে বহিনোঙরে অপেক্ষা করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনই এই অবস্থা হলে রমজানে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা অনুমেয়। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের বিভিন্ন ধরনের মূল্যমান ও সুদের হার বেঁধে রাখার ফলেই ডলার সংকট কাটানো যাচ্ছে না। এই বিষয়টি দেখার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। আমি আজ আর খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার নিয়ে বিশেষ কথা বলব না। তবে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতেই হয়। আমি এর আগে বলেছি কেবল দুর্নীতি রোধ করা গেলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি ২.৫ ভাগ বাড়ত। সম্প্রতি সিপিডির এক জরিপে বলা হয়েছে, দুর্নীতি ব্যবসার পথে প্রধান বাধা। যেসব দেশ উন্নয়নের পথে রয়েছে তারা দুর্নীতি নিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন তার পার্টির দেড় লাখ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। যার মধ্যে পলিটব্যুরো সদস্যও রয়েছে। ভিয়েতনাম তার উপ-প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে। কিন্ত আমরা মন্ত্রী-আমলাদের ক্ষেত্রে কি পেরেছি? পারি নাই। একটা পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ থমকে যায়। কিন্ত দুর্নীতি বন্ধ না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ