আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও শরীক দলের এখন পর্যন্ত নির্বাচন মুখী কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির সাবেক এই এমপির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে জেএসডি'র সভাপতি আ স ম আবদুর রবের কঠোর সমালোচনা করে এক হাত নিয়েছেন।
এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের নির্বাচনী এলাকা লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর)। তিনি ওই আসনে বিএনপি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্যও। এছাড়াও তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সদস্য।
গত কয়েকদিন ধরে তিনি কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় দলীয় মৃত নেতা-কর্মীদের কবর জিয়ারত, সভা-সমাবেশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। এসময় তিনি তার অনুসারীদের গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের ক্যাম্পেইন করার জন্য নির্দেশনা দেন। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রামগতি উপজেলার রামদয়াল এলাকায় নিজ বাসভবনে দীর্ঘ বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ক বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন আশরাফ উদ্দিন নিজান।
ওই সময় তিনি বিএনপির শরীক দলের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কাদের সিদ্দীকি, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রবসহ সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এরা কেউই বিএনপির না। এমনকি এরশাদ সরকারের গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা আ.স.ম রবের নাম উল্লেখ করেও তিনি সমালোচনা করেন। তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার বক্তব্যের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমন থাকবে, ভোটের প্রস্তুতিও তেমন থাকবে। কারণ হঠাৎ করে ভোট করা যায় না। আপনারা মনে করেন মানুষ ভোট দিয়ে দিবে? না। ভোটের একটা কারিশমা আছে। আমি তো একজন ক্যান্ডিডেট, গত ৮ বছর কেন্দ্রেই যেতে পারিনি। অতএব যেমনিভাবে আন্দোলনে সক্রিয় আছি, তদ্রূপ আমাদের আরও বেশি করে ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেনো শেখ হাসিনার পতন হলেই বা শেখ হাসিনা রিজাইন করলে আমরা কাউকে না বলে ভোটে নেমে যেতে পারি। কারণ এখানে (লক্ষ্মীপুর-৪ আসন) আমিই একমাত্র প্রার্থী। এখানে আর কোনো ক্যান্ডিডেট নেই।
তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রব, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। ১৯৮৬ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি, কিন্তু আ.স.ম রব ভোট করেছে। আরও কয়েকটি ভোটে হেরে যাচ্ছিল রব। ১৯৮৮ সালে এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দল হয়েছে আ.স.ম আব্দুর রব। ১৯৯৬ সালে বিএনপি এক সিটের জন্য সরকার গঠন করতে পারিনি। সে আবার শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ওই সিট দিয়ে দিছে। অতএব এধরনের লোকদের আমরা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, আশেপাশেও জায়গা দেবো না। তার তো আমার সঙ্গে জামানতই বাতিল হয়ে গেছে।
আ স ম রবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি শুনে রাখেন, আমি ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গেছি, ইনশাআল্লাহ। আমি শ্রমিক সমাবেশ থেকে বলে দিলাম ইলেকশনে আমি দাঁড়িয়ে গেছি। এই বক্তব্য প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও সরকারকে হটিয়ে নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। এজন্য আন্দোলনের পাশাপাশি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে নেতা-কর্মীদের কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা শাহেদ আলী পটু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেনসহ আরও অনেকে।
এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিএনপির সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দীন নিজানের এমন বক্তব্য নিয়ে জেলাজুড়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, আমি তার এ বক্তব্য শুনি নাই। তবে, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, ভোটের দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকতেই পারে। কিন্তু পূর্বশর্ত হলো আগে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে। ভোটের প্রস্তুতি আমাদের সব সময় আছে। আমাদের কর্মী সমর্থকের অভাব নেই। তিন দিন আগেও আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও জানান, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি (আশরাফ উদ্দিন নিজান) এসব কথা বলতেই পারেন। তবে শেষে অ্যাডভোকেট হাছিব তার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতার বিষয়ে আমার বক্তব্য প্রকাশ করা ঠিক হবে না।
বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ভিডিও বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, শরীক দলের অন্যান্য যেসব নেতাদের বিষয়ে বলেছি, তারা যে কোনো সময় বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। তাই আগে থেকেই নেতা-কর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত