নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি লন্ডনে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা পরিদর্শন করেছেন। তার সামাজিক ব্যবসার ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত “সোসাল এন্টারপ্রাইজ ইউ.কে”- এর আমন্ত্রণে গত মার্চ ২২-২৫ তিনি এই সামাজিক ব্যবসাগুলো পরিদর্শন করেন।
এই উপলক্ষ্যে সিভিল সোসাইটি ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক ব্যবসার উদ্দেশ্য ও সামাজিক ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে তার ফলপ্রসূ বৈঠক হয়।
তার লন্ডন সফর শুরু হয় ২৩ মার্চ সোসাল এন্টারপ্রাইজ ইউ.কে- তে তাকে অভ্যর্থনা প্রদানের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস হেলেনা কেনেডি, হাউস অব পার্লামেন্টের সিবিই লর্ড ভিক্টর অ্যাডেবোয়লে, গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ও ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর পামেলা জিলেস এবং সিভিল সোসাইটির অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।
সামাজিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপ্তি ও গভীরতা পর্যবেক্ষণে পরদিন প্রফেসর ইউনূস সোসাল এন্টারপ্রাইজ ইউ.কে- এর সহায়তাপ্রাপ্ত কয়েকটি সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এসময়ে তিনি নিকটস্থ লন্ডনের “কুইন এলিজাবেথ অলিম্পিক পার্ক” পরিদর্শন করেন যেখানে বিখ্যাত “২০১২ অলিম্পিক গেমস” অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি এই পার্কেই অবস্থিত সামাজিক ব্যবসা “বাইসাইকেল ওয়ার্কস” এর কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখেন যা সকলের জন্য বাইসাইকেল ব্যবহারের গুরুত্বকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত। এসময় তিনি বাইসাইকেল ওয়ার্কসের কর্মচারীদের সাথে বাইসাইকেল চালানো উপভোগ করেন।
২৫ মার্চ যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলী এমপি প্রফেসর ইউনূসকে পার্লামেন্ট ভবনে স্বাগত জানান। রুশনারা আলী এমপি এর আয়োজনে এই বৈঠকে যোগ দেন আরও কয়েকজন পার্লমেন্ট সদস্য। প্রফেসর ইউনূসের বিভিন্ন আইডিয়া ও অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
তার লন্ডন অবস্থানকালে প্রফেসর ইউনূস যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েল্থ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড্রু মিশেল এমপি এর সাথে বৈঠক করেন যিনি প্রফেসর ইউনূসকে তার কার্যালয়ে স্বাগত জানান। মন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিশেল, যিনি বরাবরই প্রফেসর ইউনূস ও তার তত্ত্ব ও অবদানের একজন গভীর গুণগ্রাহী, এসময় ঢাকায় প্রফেসর ইউনূসের বাসায় তার সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করেন।
বৈঠকের সময় মন্ত্রী মিশেল প্রফেসর ইউনূসকে একজন “ন্যাশনাল ট্রেজার” হিসেবে বর্ণনা করেন। মন্ত্রী মিশেল তার জীবনী গ্রন্থ “বিয়ন্ড এ ফিঞ্জ: টেলস ফ্রম এ রিফর্মড এস্টাব্লিশমেন্ট লেকি”- তে তিনি প্রফেসর ইউনূস ও দারিদ্র বিমোচনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রফেসর ইউনূসকে বইটির একটি স্বাক্ষরিত কপি উৎসর্গ করেন।
এসময় অপর পার্লামেন্ট সদস্য ও ফরেন অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির সভাপতি অ্যালিসিয়া কেয়ার্ণস এমপি পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থিত তার অফিসে প্রফেসর ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান। সামাজিক পরিবর্তনে প্রফেসর ইউনূসের কাজ ও তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ অভিঘাত এবং মানবতার জন্য তার জীবনব্যাপী আত্মোৎসর্গের জন্য প্রফেসর ইউনূসের প্রশংসা করে অ্যালিসিয়া কেয়ার্ণস এমপি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রফেসর ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তার এবারের যুক্তরাজ্য সফরকালে প্রফেসর ইউনূস সোসাল এন্টারপ্রাইজ ইউ.কে-এর প্রতিষ্ঠাতা মি. পিটার হলব্রুকসহ প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক করেন। এছাড়াও তিনি সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করেন এবং এসব বৈঠকে সামাজিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত