দেড়শ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ঢেমঢেমিয়া কালি মেলা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমান্তে পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বৈরবাড়ি, চাপাপাড়া ও হিরামণি মৌজায় এ মেলার অবস্থান।
পূজা অর্চনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা। সাতদিন ধরে পূজা চললেও সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে এ মেলা। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে ১২দিনব্যাপী এই ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা।
উত্তরবঙ্গের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের বিনোদনসহ মিলনমেলা হিসেবে ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এই মেলা ঘোড়া ও মহিষের মেলা হিসেবেও পরিচিত।
মেলাকে ঘিরে নানাধরণের দোকান বসলেও প্রধান আকর্ষণ ঘোড়া ও মহিষের কেনা-বেচা। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা নানা জাতের ঘোড়া ও মহিষ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ঘোড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় তার জাত ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে।
এ বছর যশোর থেকে আসা ঘোড়া বিক্রেতা সিরাজুল হোসেন জানান,৭টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘বেঙ্গল-২ ক্রস’ জাতের ঘোড়া, বিক্রেতা ভালোবেসে ঘোড়ার নাম রেখেছেন ‘পংঙ্খিরাজ’। দাম হাঁকিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। যদিও ক্রেতারা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা বলেছে।
মেলায় আলিফ লায়লা, কিরণমালা, সুন্দরী, পংঙ্খিরাজ এবং রাজা বাহাদুরসহ বিভিন্ন জাতের নামের ঘোড়া এসেছে।
মেলার অপর প্রান্তে রয়েছে সারিসারি মহিষ। মহিষের দাম নির্ধারিত হয় আকার, আকৃতি এবং ওজনের ওপর ভিত্তি করে।
ঠাকুরগাঁও হরিপুর থেকে আসা মহিষ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন মেলায় এনেছেন ১০ জোড়া বিশাল জাতের মহিষ। যার মধ্যে অন্যতম কালামানিক, যার জোড়ার মূল্য হাকিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। আকার আকৃতি ভেদে প্রতিজোড়া মহিষ ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
মহিষ ক্রেতারা তাদের পছন্দের মহিষ কিনতে মেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটোছুটি করছেন এবং বিক্রেতা আশাবাদী যে এ বছর তারা লাভবান হবেন।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান বাবুকে সভাপতি এবং জগদীশ চন্দ্র সরকারকে সেবায়েত ও পূজারি করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মেলা ও পূজা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী।
জানা যায়, প্রয়াত সংশয় সরকার বাংলা ১২৮০ সালের কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী একটি পাঠাবলীর মাধ্যমে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলার সূচনা করেন।
শ্যামা পূজার সেবায়েত ও পূজারি জগদীশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রতিবছর কার্তিক মাসের আমাবশ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্যামা পূজায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। শ্যামা পূজার প্রথম রাতে লগ্নমতে কালি পাটে চড়া। কালি পাটে চড়া অর্থাৎ পাঠা বলি দান। কালি পাটে উঠবে এ মর্মে অনেক আগে থেকেই শোরগোল চলতে থাকে। সে আলোকে আশাবাদী দর্শকেরা মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। কালি মাতার সম্মানে ভক্তরা শত শত আবার কেউ কেউ হাজার হাজার নগদ অর্থ, সোনা, রূপাসহ মূল্যবান অনুদান সেবায়েতকে মায়ের তথা কালি মন্দির অনুদান এবং উন্নয়নে দান, গুরুদক্ষিণা, প্রকাশ্য প্রণামি দিয়ে থাকেন।
শ্যামা পূজার ২-৪ দিন আগে নির্মিত কালিকে ঢেমঢেমিয়া কালি মেলা মন্দির প্রাঙ্গণে পূজার উদ্দেশ্যে এলাকার হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিয়ে আসেন। কালিমাতা এসে অবস্থান নেয় তার নিজস্ব অট্টালিকায়। হিন্দু ধর্ম মতে শ্যামা পূজা সাত দিন ধরে চলে, ঠিক লগ্নের সময় সেবায়েত পূজা আরম্ভ করেন ও আগন্তকদের ভোগ বিতরণ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/মুসা