মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
ডা. লিপি হত্যা

১৪ দিনেও উদ্ঘাটন হয়নি রহস্য, তদন্ত থমকে আছে জিজ্ঞাসাবাদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাবিরা রহমান লিপি হত্যার ১৪ দিন পার হলেও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাকে খুন করা হয়েছে নিশ্চিত হলেও কারণ কিংবা হত্যাকারীর বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি কোনো তদন্ত সংস্থাই। তবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অন্তত ৩০ জনকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেই সব সংস্থা আটকে আছে, কেউই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। থানা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ডা. লিপি খুনের বিষয়ে তদন্ত করছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই প্রতিবেদককে জানান, ডা. লিপি হত্যায় এখনো দৃশ্যমান কোনো ক্লু বা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, হত্যা মামলাটি তদন্তের এই পর্যায়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। কাউকে গ্রেফতারও নয়। তদন্তের প্রয়োজনে সন্দেহভাজনসহ ডা. লিপির পরিচিতজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, ঘটনার পর ওই চিকিৎসকের বাসার সাবলেট থাকা তরুণী, নিরাপত্তারক্ষীসহ কয়েকজনকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু হত্যায় এ পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো ক্লু নেই, তাই কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখছে না পুলিশ। প্রয়োজনে যে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

ডিবির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ঘটনার কোনো কিছু তাদের কাছে নেই। সব বলতে পারবেন রমনা বিভাগের ডিসি।

যদিও ডিবিসূত্রে জানা গেছে, নিহতের ভাড়া বাসায় কার কার যাতায়াত ছিল কিংবা অপরিচিত কারও যাতায়াত ছিল কি না জানার চেষ্টা চলছে। ডা. লিপির ভাড়া বাসা ও আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। দূরের কয়েকটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেসব স্পষ্ট নয়।

এদিকে ঘটনার দিনই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট লাশের শরীরে, দরজায় ও চেয়ারে একাধিক জনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছে। আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ও ঠান্ডা কফির মগ।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ঢাকা মেট্রো-সাউথ) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ক্রাইম সিন থেকে যেসব ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে সেগুলোর প্রোফাইলিং থানা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনগুলো ভিজিবল আর কোনগুলো ভিজিবল নয় তা থানা পুলিশই বলতে পারবে। তবে তারা ঘটনাটি নিয়ে বাহ্যিকভাবে তদন্ত করছেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে ডা. লিপির দূরত্বের কারণও জানার চেষ্টা করছেন তারা। আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন, লিপি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন তবে তার স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অবর্তমানে নিহতের বাসায় কারও যাতায়াত ছিল কি না, কারও সঙ্গে বিশেষ ফোনালাপ হতো কি না তা-ও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পরকীয়া, ডাকাতি ও পারিবারিক দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিয়ে ক্লু খোঁজা হচ্ছে। ছেলেকে নিয়ে তিনি সম্প্রতি কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ডা. লিপির অবসর সময় কীভাবে কাটত ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ জানান, এ হত্যার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে। দ্রুতই রহস্য উদ্ঘাটন হবে।

উল্লেখ্য, ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে ডা. লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর