মরিয়মের বয়স তখন ছয় কি সাত। দুই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক দিন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যায়। বিভিন্ন প্রাণী দেখতে দেখতে হঠাৎ হারিয়ে যায় সে। দিগ্বিদিক খোঁজাখুঁজির পর একসময় হারিয়ে ফেলে পরিবারকেও। তারপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে মরিয়মের ঠাঁই হয় এক দম্পতির বাড়িতে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। এরই মধ্যে কেটে যায় ১১ বছর। মরিয়ম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া গ্রামের মৃত আমছর আলী ও মোছা. বেগম দম্পতির মেয়ে। স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই মরিয়ম খুঁজে পেয়েছে তার হারানো পরিবারকে। জানা গেছে, মরিয়ম ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যান। অভাবের সংসারে খরচ জোগাতে দুই বোন লাইলি ও সুফলা চাকরি করতেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। ২০১০ সালে এক দিন সেই বোনদের সঙ্গেই দেখা করতে গিয়েছিলেন মরিয়মসহ পরিবারের লোকজন। পরদিন সবাই মিলে বেড়াতে যান মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। পরে সেখানেই হারিয়ে যায় মরিয়ম।
জানা যায়, হাতবদল হয়ে মরিয়ম সবশেষ আশ্রয় পায় এক মানবিক দম্পতির হাতে। সরকারি চাকরিজীবী মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও রাবেয়া আহমেদ দম্পতির কাছেই দীর্ঘ ১১ বছর তাদের মেয়ের মতোই আদর-যত্নে বেড়ে ওঠে।
জনপ্রিয় উপস্থাপক আরজে গোলাম কিবরিয়া সরকারের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’ তার সন্ধান পায়। গত ২৬ অক্টোবর রাত ৮টা ১৯ মিনিটে আরজে কিবরিয়া পেজে প্রচারিত হয় মরিয়মের একটি সাক্ষাৎকার। ওই রাতেই মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন মরিয়ম।
মৃত্যুর আগে হলেও হারানো মেয়েকে ফিরে পেতে চেয়েছিলেন মা মোছা. বেগম। তিনি বলেন, হারানো মেয়েকে ফিরে পেতে অনেক মানুষের কাছে গিয়েছি, তাদের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি কিন্তু মেয়েকে পাইনি। অনেক কান্নাকাটি করেছি আর আল্লাহকে বলেছি, মেয়েকে না দেখিয়ে আমার মৃত্যু দিও না।