বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দিনভর চাপাতা বিক্রি বন্ধ সন্ধ্যায় কেনার সিদ্ধান্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের মরগেন টি ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ভিতরে দলবল নিয়ে কারখানার কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানায় ঢুকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা চাপাতা কেনা বন্ধ রাখে পঞ্চগড়ের ২১টি চা কারখানা। গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় চা কারখানা কর্তৃপক্ষ কাঁচা চাপাতা কেনার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এর পরও সন্ধ্যায় মরগেন টি ফ্যাক্টরিতে চা চাষির ওপর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সমাবেশ করে চা চাষি নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। মামলাসূত্রে জানা গেছে, প্রধান আসামি নুরুজ্জামান নুরুর নির্দেশে সোমবার বিকালে মামলার আসামি জাহিদুল ইসলাম ও সৈয়দ বশিরুল আলম সরকার নামে দুই যুবক চা চাষি পরিচয়ে নিম্নমানের কাঁচা চাপাতা বিক্রির জন্য কারখানায় যান। তারা বহুদিন ধরে নিম্নমানের কাঁচা চাপাতা সরবরাহ করে আসছিলেন। ওই দিন মামলার বাদী কারখানার সুপারভাইজার নাজমুল হুদা নিম্নমানের কাঁচা চাপাতা কিনতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে বাগ্্বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে একসময় কারখানার বাকি কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর শুরু করেন তারা। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেন। পরে নুরুজ্জামান নুরু দলবল নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করেন। পুলিশের উপস্থিতিতে কারখানার কর্মচারীদের তারা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এ ঘটনায় মরগেন টি ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০-২৫ জনকে। তবে নুরুজ্জামান নুরু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দুজন ক্ষুদ্র চা চাষিকে মরগেন টি ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা আটকে রেখে মারধর করছিলেন। ওই চা চাষিদের কাছ থেকে চাপাতা কেনার সময় কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচা চাপাতার দাম না দেওয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন তারা। পরে তারা আমাকে জানান। আমি কারখানায় প্রবেশ করলে আমাকেও মারতে আসেন তারা।’ মরগেন টি ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী নিয়াজ আলী চিসতি বলেন, ‘আর কত সহ্য করব। এই চেয়ারম্যান ও তাদের লোকজন প্রায়ই চাঁদার জন্য কারখানায় আসেন।

তাদের সম্মান করি। অযৌক্তিকভাবে নিম্নমানের চাপাতা কিনতে বাধ্য করতে চান তারা। এতে আমার ফ্যাক্টরির বদনাম হবে। নিম্নমানের চাপাতা দিয়ে চা উৎপাদন করলে তৈরি চায়ের মান খারাপ হয়ে যায়। অকশন মার্কেটে দাম পাওয়া যায় না। তাই নিম্নমানের চাপাতা কিনি না। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে লোকজন আমার কারখানায় আক্রমণ করে। তারা আমার কারখানা বন্ধ করে দেয়।’ এদিকে মরগেন টি ফ্যাক্টরিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে চা চাষিদের কাছ থেকে এক দিনের জন্য কাঁচা চাপাতা কেনা বন্ধ রাখে ২১টি চা কারখানা। এতে বিপাকে পড়েন পঞ্চগড়ের কয়েক হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। গতকাল সন্ধ্যায় তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। পঞ্চগড় চা চাষি নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বটলিফ টি ফ্যাক্টরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েসনের পঞ্চগড় জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিঞা বলেন, ‘নিম্নমানের কাঁচা চাপাতা কিনলে তৈরি চাপাতার দাম কমে যায়। সমতল অঞ্চলের চায়ের মান খারাপ হয়। এর পরও জোর করে কারখানায় ঢুকে চাষিরা নিম্নমানের কাঁচা চাপাতা সরবরাহের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে প্রায় সব কারখানায় কিছুদিন ধরে সংকট চলছে। আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের কাঁচা চাপাতা কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আজ (গতকাল) থেকে চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা চাপাতা কিনব।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অতি দ্রুত সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর