মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা

নিজের গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন গাজী মাজহারুল

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের কাছে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন পিতা ও বড় ভাইয়ের মতো অভিভাবকতুল্য। অত্যন্ত রসিক, ভদ্র, উদার ও বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন তিনি। বিভিন্ন শিল্পী, সংগীত পরিচালক ও কলাকুশলীদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করে ফেলতে পারতেন দ্রুত। তার বিপুল সৃষ্টি নিয়ে তিনি নতুন প্রজন্মের কাছেও টিকে থাকবেন। বিষয়বস্তুর কথা শুনে দ্রুত প্রাসঙ্গিক গান লিখতে পারতেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

সদ্যপ্রয়াত গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মরণানুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চলচ্চিত্র ও সংগীতাঙ্গনের মানুষ। গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ স্মরণানুষ্ঠান। যৌথভাবে এ স্মরণসভার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি ও গীতিকবি সংঘ।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত প্র?য়াত এই কিংবদন্তির জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা এবং স্মৃতিচারণ করেন বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, গীতিকবি সংঘের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল, কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা, কুমার বিশ্বজিৎ, নকীব খান, খুরশিদ আলম, জুলফিকার রাসেল, গীতিকবি সংঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম মোরশেদ, রফিকুল আলম, সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান, সুরকার রিপন খান, গাজী আবদুল হাকিম প্রমুখ। আয়োজনের শুরুতেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুটা আমার কাছে একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত ছিল। তার ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ শুনলে এখনো আনমনা হয়ে পড়ি। অতীত তো বটেই ভবিষ্যতের গীতিকারদের মাঝেও তিনি অমর হয়ে থাকবেন। সংস্কৃতির জন্য বাঙালিরা পৃথিবীর মাঝে অনন্য। তার গানগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। কাজটি তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকেই প্রাথমিকভাবে করতে হবে। ফিল্ম আর্কাইভও কাজটি করতে পারে। শুধু গান নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। 

কন্যা দিঠি আনোয়ার বলেন, মৃত্যুর কিছুদিন আগেও বাবা মাকে বলেছিলেন, তুমি আমাকে অসাধারণ একটা পরিবার দিয়েছ। তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাবার কোনো অপূর্ণতা ছিল না। বাবা ৭৯ বছরে চলে গেছেন কিন্তু এর মাঝে ৬০টি বছরই তিনি চলচ্চিত্র ও বাংলা সংগীতকে দিয়ে গেছেন। বাবার সব গান এখনো সংরক্ষণ করা যায়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ গান সংগ্রহ করা গেছে। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এটি অসম্ভব।

স্ত্রী জোহরা গাজী বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার এক ইতিহাসের নাম। তার বিশাল কর্মজীবন। আমি তার একটা ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে গর্বিত। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সৎ, সফল, স্বার্থক, নিরহংকার মানুষ ছিলেন।

অন্য বক্তারা বলেন, ২০ হাজারের বেশি গান লিখে তিনি এ দেশের সংগীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি শুধু গীতিকবিই ছিলেন না, চারণ কবির চেয়েও দ্রুততায় তিনি স্নাত হতে পারতেন। তাকে ভালো না বেসে পারা যায় না, ভুলে থাকা যায় না এমন মানুষ তিনি। তাকে চর্চার মধ্যে রাখলে কখনো মনে হবে না বাংলাদেশের বাংলা গান নিঃস্ব। বাংলাদেশের প্রকৃতি তার গানে কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি হাতে-কলম তুলে নিয়েছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হাতে-কলম তুলে নেওয়াকে তিনি কর্তব্য মনে করেছিলেন, এ কথা বলে গেছেন নিজেই।

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমার মনে হয় প্রয়াণের মধ্য দিয়ে গাজী ভাইয়ের আরেকটা জীবন শুরু হলো। তার এই জীবনে আমাদের দায়িত্ব অনেক। সবশেষে প্রদর্শিত হয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র।

সর্বশেষ খবর