রাজধানীর হাতিরঝিল থানার দিলু রোড এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার আলী। নিজ বাসায় মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী হিসেবে নুরজাহান (ছদ্মনাম) নামে এক নারীকে নিয়োগ দেন। নিয়োগের তিন দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ও গৃহকর্মী নূরজাহানকে রেখে অফিসে যান গৃহকর্তা মনোয়ার। পরে আমেরিকায় থাকা তাদের প্রবাসী মেয়ে ফোন করে জানান, তার মা ফোন রিসিভ করছেন না। বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থান পান। তছনছ পুরো বাড়ি। নুরজাহান নামে নিয়োগ দেওয়া গৃহকর্মীও বাসায় নেই। স্ত্রীকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টার মধ্যে স্ত্রী রেজিনা রহমানকে বাসায় একা পেয়ে কাজের মহিলা নুরজাহান ও অজ্ঞাত আরও একজন মিলে কৌশলে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে ৪ লাখ টাকা, একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্ত্রী সুস্থ হলে তিনি হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। ওই মামলার দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে পিবিআই-এর ওপর ন্যস্ত হওয়ার পর খোঁজ মেলে ছদ্মবেশী নুরজাহানের। তার আসল নাম বিলকিস। পেশাদার চক্রের সদস্য তিনি। একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ নেন তিনি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গত বুধবার রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা হওয়ার পর হাতিরঝিল থানার এসআই রহমত উল্লাহ রনি তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরে এ রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদীর নারাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় নুরজাহানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরজাহান নিউ ইস্কাটনের ওই বাসায় লুটপাটের কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কার ঢাকা এবং জামালপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন। নুরজাহানের নামে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় চারটি চুরির মামলা রয়েছে।