গান্ধী বনাম গান্ধীর লড়াই দেখেছেন এলাকার মানুষ। ১৯৮৪ সালে 'আমেথি' লোকসভা কেন্দ্রে ইন্দিরা পুত্রবধু মানেকা গান্ধীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রাথী ইন্দিরা পুত্র রাজীব গান্ধী। গান্ধী পরিবারের মধ্যে দূরত্ব সেসময় প্রকাশ্যে চলে আসে। ১৯৬৭ সাল থেকে লক্ষ করলেই দেখা যাবে বেশির ভাগ নির্বাচনে আমেথি কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীরা। ১৯৭৭ সালে হঠাৎ-ই ছন্দপতন। সে বছর সঞ্জয় গান্ধীকে হারিয়ে দেন ভারতীয় লোকদল (বিএলডি)-এর রবীন্দ্র প্রতাপ সিং।
১৯৮০ সালে ছবিটা আবার আগের মতো। সেই রবীন্দ্রকে হারিয়েই ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন সঞ্জয় গান্ধী। এরপর ১৯৮১, ১৯৮৪, ১৯৮৯, ১৯৯১- একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। ১৯৯১ সালে আমেথি কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সোনিয়া গান্ধী। শেষ দুই বার অর্থাৎ ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আমেথি থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এমন একটি নিশ্চিত আসনেও কংগ্রেস এবার শক্ত লড়াইয়ের মুখে পড়তে চলেছেন রাজনৈতিক মহলের ধারণা। আগামীকালই এই কেন্দ্রে রাহুলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
এবারের ত্রিমুখী লড়াইয়ে এই কেন্দ্রে কংগ্রসকে সবচেয়ে বেশি বেগ দিতে পারে আম আদমি পার্টি। বিশেষ করে আপ এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর হবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। এই সম্ভাবনা আঁচ করেতে পেরেই এবার আমেথিতে শুরু থেকেই জোর প্রচার চালিয়েছে কংগ্রেস নেতাকর্মীরা। মনোনয়নপত্র পেশ করতে এসে আমেথি লোকসভা এলাকার দীর্ঘ পথ জুড়ে রোড শো করে নিজের শক্তি প্রদর্শন করেছেন দলের সহ-সভাপতি। প্রচারের তেজ বাড়াতে মা সোনিয়া এবং বোন প্রিয়াঙ্কাকেও নিয়ে এসেছিলেন রাহুল।
যদিও এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয় আম আদমি পার্টির প্রার্থী কুমার বিশ্বাস। আমেথি স্টেশন থেকে অল্প কিছু দূরেই চৌমাথায় একটি অস্থায়ী অফিস করেছে আপ। প্রতিদিন সকাল সকালই গাড়ি নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের পাশাপাশি জনসভাও করছেন। কুমার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস মিথ বলে এখানে কিছু নেই, আর মানুষও মিথ-টিথ কিছু বোঝে না। মানুষ বোঝে কাজ। যারা কাজ করবেন, সারা বছর মানুষের পাশে থাকবেন শেষ হাসি তারাই হাসবেন।
কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও রাহুলের চিন্তা মোদি ঝড় নিয়ে। মুখে মোদি ঝড়ের কথা স্বীকার না করলেও এই নির্বাচনে যে মোদি ঝড়ের প্রভাব পড়বে তা অতি বড় কংগ্রেস সমর্থকও বলছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপির তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি। নির্বাচনী প্রচারেও বিজেপির থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে ছিল কংগ্রেস। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি প্রচারের শেষ দিনে এসে ঝড় তুলেছেন। আক্রমণ করতে ছাড়েনি 'মা-ছেলের সরকার' বলে। যদিও আমেথি থেকে তৃতীয়বারের জন্য জিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে যোগ্য তা প্রমাণ করতে চান রাহুল। কারণ এবার লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাহুল-ই প্রধানমন্ত্রীর প্রধান দাবিদার।