বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দোপাধ্যায় তার নিজের জনপ্রিয়তার উপর ভর করে ছয়বার নির্বাচিত হয়েছেন 'দক্ষিণ কলকাতা' আসনটি থেকে। আগামী ১২ মে শেষ দফার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে যে ১৭টি আসনে ভোট হতে চলেছে দক্ষিণ কলকাতা তার মধ্যে অন্যতম।
১৯৯১ সালে তৎকালীন সিপিআইএম সংসদ সদস্য বিপ্লব দাশগুপ্তকে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে প্রথমবার সংসদে গিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তারপর ১৯৯৮ সালে নিজে নতুন দল গঠন করলেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৬ বার এই কেন্দ্র থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই কেন্দ্রে এমপি পদ ত্যাগ করে তিনি ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন। ২০১১ সালে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে ফের উপনির্বাচন হয়। এমনকি সেসময়ও মমতার নামের উপর ভর করেই বিপুল ভোটে জিতেছেন দলের সৈনিক সুব্রত বক্সি।
কিন্তু বিগত তিন বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। এখন আর আগের মতো বাম শাসন নেই। নেই বিরোধী নেত্রীর আগের মতো জনপ্রিয়তাও। এখন মমতার বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়াতে জর্জরিত তিনি। তাছাড়া শেষবার ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জিতেছিলেন। এবার একদিকে যেমন জোট হয়নি তেমন মমতার প্রশাসনের কাজকর্মে সাধারণ মানুষ বিরক্ত। বিভিন্ন কারণে সংখ্যালঘুদের আস্থাও হারিয়েছেন তিনি। সর্বোপরি মোদি ঝড়ের প্রকোপ তো আছেই। তাই তার লড়াই এবার কঠিন। বলা যেতে পারে অগ্নিপরীক্ষার সামনে তিনি। তবে এই অগ্নিপরীক্ষা হার-জিতের নয়। তার জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়ল কিনা তাই দেখার বিষয়।
দক্ষিণ কলকাতায় এবার সুব্রত বক্সি দাঁড়ালেও নির্বাচন হবে মূলতঃ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নামেই। প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার সুযোগ নিয়ে ব্যবধান কমাতে বিরোধীদের হেভিওয়েট প্রার্থীরাও এবার দক্ষিণ কলকাতার ময়দানে। কংগ্রেসের মালা রায়, সিপিআইএম-এর নন্দিনী মুখার্জি এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় প্রত্যেকেই এবার রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীকে। তাদের আশা প্রশাসক মমতার বেচাল মন্তব্য,কাজকর্মকে দক্ষিণ কলকাতার মানুষই জবাব দেবেন। দক্ষিণ কলকাতার হাওয়া কোনদিকে বইবে তা জানা যাবে ১৬ মে। আপাতত সবকিছুই পূর্বাভাস।