রাহুলের নির্বাচনী কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের আমেথিতে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এবার মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারানসিতে রোড শো জনসভা করে আমেথির সেই বদলা নিলেন রাহুল গান্ধী।
আগামী সোমবার ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভাট। ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে এই কেন্দ্রেও ওই দিন ভোট হবে। তার আগে আজ শনিবার হচ্ছে শেষ দিনের ভোট প্রচার। এদিন বারনসিতে রোড শো এবং জনসম্পর্ক অভিযান করেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। এই কেন্দ্রে মোদির বিপক্ষ প্রার্থী কংগ্রেসের অজয় রায়ের সমর্থনে সকাল ৮ টার কিছু পরেই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল বারানসির গোল গাড্ডা চোরাহা থেকে রোড শো শুরু করেন রাহুল। মাথায় তেরঙ্গা রঙের নেহেরু টুপি পড়ে হুড খোলা গাড়িতে করে শহর প্রদক্ষিণ করেন রাহুল। তার সঙ্গে ছিলেন দলের নেতা গুলাম নবী আজাদ, রশিদ আলভি, মুকুল ওয়াসনিকসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। দলীয় পতাকা, কাটা হাতের ফেস্টুন সঙ্গে নিয়ে মিছিলে ছিলেন কয়েক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থক। রাহুলের এই রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সানাইবাদক বিসমিল্লা খাঁর পরিবারের লোকেরাও। তারা পুরো শো'তেই সানাই পরিবেশন করতে থাকেন। বারানসির বিভিন্ন এলাকা জুড়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রোড শো শেষ হয় বারানসির কেন্দ্রস্থল লঙ্কাতে। এরপর রাহুল চলে যান বারানসি শহরের অনতিদূরে চিরাইগাঁও ব্লকের সাঁথওয়াতে। সেখানে চন্দেৌলি ময়দানে একটি নির্বাচনী জনসভা করেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
সভা থেকেই বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির গুজরাট মডেলকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, 'মোদিজি কি করেছেন? রাজ্যের গরীব কৃষকদের বঞ্চিত করেছেন, আদানি গোষ্ঠীকে মিটার প্রতি এক রুপি দরে কৃষকদের ৩৫ হাজার চাষযোগ্য জমি দেওয়া হয়েছে। পরে আদানী গোষ্ঠী সেই জমি মিটার প্রতি ৮০০ রুপি দরে বিক্রি করেছে বলেও রাহুলের অভিযোগ। এরকমভাবে দেশ চলতে পারে না। 'আমি নারীদের শক্তি দেব' একটি নির্বাচনী পোস্টারে নারীদের উদ্দেশ্যে মোদির এই বক্তব্যের কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, 'এই দেশ খুব শক্তিশালী, নারীরাও শক্তিশালী, তাই উপর থেকে কারও শক্তি দেওয়ার দরকার নেই। বরং মহিলাদের সম্মান করতে শিখুন, তাদের ফোনে আড়ি পাতা বন্ধ করুন'। জনগণের উদ্যেশ্যে রাহুলের বক্তব্য, 'আমরা চাই আপনাদের ভাল করতে কিন্তু মোদি সবসময় আপনাদের দমিয়ে রাখতে চান।
উত্তর প্রদেশের শাসকদল সমাজবাদী পার্টির সরকারকেও একহাত নেন রাহুল। তার অভিযোগ, এই দল শুধু বিভিন্ন জাতের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নে কোন নজর নেই। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার হাজার-হাজার রুপি দিলেও রাজ্য সরকার সেই রুপি জনগণের উন্নয়নের কাজে লাগায়নি। একমাত্র দলীয় কর্মী-সমর্থকরাই তার সুফল ভোগ করেছে। রাহুলের অভিযোগ ১০০ দিনের কাজে এই সরকার অনেক পিছিয়ে আছে। রাজ্যে নতুন কোন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। কাজের খোঁজে এ রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। রাহুল বলেন, এ রাজ্যের সবকিছুই 'মেড ইন চায়না'। কিন্তু আমি চাই এবার চায়না নয়, টি-শার্ট, জুতো থেকে প্রতিটি জিনিস এখন থেকে এখানে তৈরি হবে।
গত ৫ মে রাহুলের কেন্দ্র আমেথিতে গিয়ে ভোট প্রচারের শেষবেলায় রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, এবং সোনিয়া গান্ধী এমন কি প্রয়াত রাজীব গান্ধীকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এতদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে একটি অলিখিত বোঝাপড়া ছিল। তাহলে এই যে, লোকসভা নির্বাচনে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কখনও একে অপরের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রচারে করবেন না। সেইমতো অটলবিহারী বাজপেয়ি ও লালকৃষ্ণ আদভানি কখনও অতীতে রায়বেরিলিতে সোনিয়া গান্ধী ও আমেথিতে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী সভা করেননি। আবার সোনিয়া এবং রাহুলও লক্ষ্ণৌতে অটল বিহারী বাজপেয়ি কিংবা গান্ধীনগরে আদভানির কেন্দ্রে গিয়ে ভোটে প্রচার করেননি। কিন্তু এবারই সেই অলিখিত সমঝোতা ভেঙে রাহুলের কেন্দ্র আমেথিতে গিয়ে প্রচার চালান মোদি। এদিন তারই পাল্টা হিসেবে আক্রমণের জন্য মোদিকেই বেছে নিলেন সোনিয়াপুত্র।