লক্ষ্য সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়ানো, কেন্দ্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তার দলের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেওয়া। আর সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাশালী শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায় এবার লোকসভার নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে তার গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলতে মমতার লক্ষ্য ছিল ৩০-৩২ টি আসন দখল করা। আস্থাভাজন ডানহাত মুকুল রায়ও এক সময়ে দাবি করেছিলেন যে তৃণমুল কংগ্রেসের ৩৫টি আসন পাওয়া নিশ্চিত।
লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই মমতা দাবি করেছিলেন যে, জাতীয় রাজনীতিতে তিনি নির্ণায়ক শক্তি হবেন। মমতার হিসেবে বিজেপি বা কংগ্রেস তাদের জোট সহযোগীদের নিয়েও এবারের ভোট সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পাবে না। ফলে সরকার গঠনের আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন দরকার হবে। যদি জয়ললিতা, মায়াবতী বা নিতীশ কুমারের দলগুলি মিলিতভাবে সেই সরকার করতে পারে সেক্ষেত্রে তাদের কংগ্রেসের সমর্থন নিতে হতে পারে।
আবার যদি মোদির বিজেপির নেতৃত্বে এনডি জোট এগিয়ে যায় সেক্ষেত্রেও আঞ্চলিক দলগুলো সমর্থন দরকার হলে সমর্থনের বিনিময়ে তারা বিজেপির ওপর অনেক শর্ত চাপাতে পারে । এই দড়ি টানাটানির খেলার যেসব আঞ্চলিক দলের হাতে ৩০ বা ৩৫ আসন থাকবে তারাই ভালো দল কষাকষি করতে পারবে। এটা বুঝেই মমতা এবার নিজের রাজ্য থেকে অন্তত ৩০টি আসন জিততে চান। আর এই কারণেই হয়তো বা রাজ্যে শেষ দফার ভোটে ব্যাপক সহিংসতা, রিগিং, ছাপ্পো ভোটের ঘটনা ঘটে। কিন্তু মমতার সেই আশায় পানি ঢালতে পারে বুথ ফেরত সমীক্ষা।
এবিপিআনন্দ-এসিনিয়েলসনের যৌথ জরিপ বলেছে পশ্চিমবঙ্গেও ৪২টি আসনের মধ্যে সর্বসাকুল্যে ২৪টি আসন পেতে পারে, বামফ্রন্ট পেতে পারে ১২টি। শুধু তাই নয়, ভোট পাওয়ার শতাংশের হারও এবার বামদের তুলনায় অনেক কম তৃণমূলের, ৩৩ শতাংশ। যেখানে বামদের ভোটের হার ৩৬ শতাংশ।
টাইমস নাও-ওআরজি এর যৌথ জরিপে রাজ্যের শাসক দলের আসন আরও কমছে বলে প্রকাশ পেয়েছে। তারা বলছে তৃণমূল ২০টির বেশি আসন পাবে না, বামরা পেতে পারে ১৫টি আসন।
স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি কিছুটা বিপর্যস্তের চেহারা নিয়েছে তৃণমূলের শিবিরে। না, মুখে কিছু না বললেও সূত্র তাই-ই বলছে। ভোটের পর রাতেই মমতা নিজেও 'নির্বাচন প্রক্রিয়া-বিজেপি-গণমাধ্যম' সবকিছুকে আক্রমণ করে ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়া জানান। বুথফেরত জরিপে যে তিনি আদেৌ খুশি হননি ফেসবুকে তার মন্তব্যেই পরিষ্কার।
২০০৯ সালে বামফ্রন্টের শাসনের শেষ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিল তৃণমূল। বামদের দুর্গ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের তছনছ করে দিতেও সক্ষম হয়েছিলেন মমতা। ১৯টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। এরপর ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে তিন বছরের আগের হিসাবও উল্টে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এবার এই পরিস্থিতি কেন? পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান, সারদাকাণ্ড ও তার জেরে সুপ্রিম কোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ, টেট দুর্নীতি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ঘটনায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপর স্নায়ুর চাপ বেড়েছে। তীব্র মোদি বিরোধিতার পেছনেও মমতার মানসিক চাপ নষ্ট হয়েছে মনে করা হচ্ছে। আর এর সবটাই প্রভাব ফেরতে ফেলেছে এবারের নির্বাচনে।
যদিও এসবই পূর্বাভাস। কারণ বুথফেরত জরিপের ফলাফল যে অতীতে সব সময় মিলেছে এমন নয়। ভোটাররা কাকে ভোট দিয়েছেন সেই গোপনীয়তা কারও কাছেই তারা প্রকাশ করেন না তবু এই ধরনের জরিপ থেকে ভোটের একটা প্রাথমিক চালচিত্র পাওয়া যায়। হয়তো বা আগামী ১৬ তারিখ ফল ঘোষণার দিন অন্য কোন সমীকরণের ইঙ্গিতও উঠে আসতে পারে।