বিভিন্ন নামি সংস্থার বুথ ফেরত জরিপ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে দেশের পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে রাখার পরই সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। তবে তারা এটাও মাথায় রাখছেন, বুথ ফেরত জরিপ যে বাস্তবে হুবহু মিলে যায় এমটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনেই এই জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। ওই দুই বারই এনডিএ জোটকে এগিয়ে রাখলেও চূড়ান্ত ফলাফলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটই বাজিমাত করে এবং শেষপর্যন্ত দু-দুবারই তারাই সরকার গঠন করে। কিন্তু তাতে কী! বিজেপি তথা এনডিএ জোট এই জরিপকে বাস্তব ধরেই এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের পরামর্শ মেনে বিজেপির শীর্ষ নেতারা এখন থেকেই এনডিএ জোটকে আরও বাড়াতে তৎপরতা বাড়িয়েছেন। উড়িষ্যার শাসক দল বিজেডি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। শুধু তাই নয়, এআইএডিএমকে প্রধান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। সোমবার শেষ পর্বের ভোটের পরই বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে ৫৪৩ আসনের লোকসভায় এনডিএ জোট ২৪৯-২৯০টি আসন পেতে পারে।
উল্টোদিকে কংগ্রেসও এই বুথ ফেরত জরিপকে একিবারেই আমল দিতে রাজি নয়। দলের অন্যতম নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেছেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ কিংবা কয়েকটি বুথের জরিপে পুরো দেশের ফলাফল বিচার করা যায় না। তার প্রশ্ন 'দেশে যেখানে ৮০ কোটি ভোটার আছেন সেখানে মাত্র কয়েক লাখ ভোটারের মধ্যে জরিপ করে পুরো ফলাফল জানা যায়?' আগে ১৬ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দিন...'
দলের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আহমেদও বুথ ফেরত জরিপকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি বলেন 'এই জরিপ যে ভুল তা ২০০৪ এবং ২০০৯ সালেই প্রমাণিত হয়েছে। অপেক্ষা করুন, ১৬ মে চূড়ান্ত ফল জানা যাবে'।
আর তাই বসে নেই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তিনি মোদিবিরোধী, বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই লক্ষ্যে একদিনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএসপি প্রদান মায়াবতী ও সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও সিপিআইএম নেতাদের সঙ্গেও বৃহত্তর ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তির বোঝাপড়ার জন্য কংগ্রেস নেতারা এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
নতুন লোকসভা গঠনে কাজ শুরু করেছেন প্রণব : ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশটির নতুন লোকসভা গঠনে কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে কোনো দল বা জোট যদি সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে রাষ্ট্রপতি সেই দল বা জোটকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির বৃহত্তম ভূমিকা রয়েছে।
ভারতের একটি ইংরেজি পত্রিকার খবরে গতকাল বলা হয়, প্রণব মুখার্জি গত সপ্তাহে প্রখ্যাত আইনবিদ ফলি স্যাম নারিমান, সলি সোরাবজি ও সলিসিটর জেনারেল মোহন পরাসরণের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
প্রণব মুখার্জি তার নবনিযুক্ত আইন উপদেষ্টা সাবেক কেন্দ্রীয় আইন সচিব ও সাবেক লোকসভা মহাসচিব টি কে বিশ্বনাথনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাবেক অধ্যাপক বিশ্বনাথনের রাষ্ট্রপতি ভবনের আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। কেননা রাষ্ট্রপতি সাধারণত নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের পরিবর্তে সরকারি আইন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই পরামর্শ চেয়ে থাকেন। সাধারণত নির্বাচনের ফল ঘোষণার দু-এক দিন পর রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল হস্তান্তর করে থাকে। এবার ১৬ মে ফল ঘোষণার কথা রয়েছে। সে হিসেবে ১৮-১৯ তারিখ রাষ্ট্রপতির কাছে ফল হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।