ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম গন্তব্য হতে চলেছে টোকিও। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ভোটের ফলাফল। বুথফেরত সব সমীক্ষার অভিমুখ অনুযায়ী সরকারের শীর্ষ দায়িত্ব নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রধানমন্ত্রী যিনিই হোন, দায়িত্ব পাওয়ার পরই তাকে বারবার ছুটতে হবে বিদেশে। কারণ জুলাই থেকে রয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বহুপক্ষীয় সংগঠনের (যেমন জি-২০, রাষ্ট্রপুঞ্জে সাধারণ অধিবেশন, ব্রিকস, আসিয়ান ইত্যাদি) বৈঠক। কিন্তু কূটনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর নভেম্বরে জাপানে। সফরের প্রধান লক্ষ্য দেশের পরিকাঠামোব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য জাপানের সর্বাঙ্গীণ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আদায়।
নরেন্দ্র মোদি যদি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন তাহলে জাপানের সঙ্গে তার পূর্বতন সুসম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় স্তরে কাজে লাগবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। দুই বছর আগে জাপান সফরে গিয়ে মোদির উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার বিষয়টিই শুধু নয়, বর্তমানে যে ১৯টি বড় জাপানি বিনিয়োগ (পরিকাঠামো, গাড়িশিল্প, উৎপাদন শিল্প, ব্যাংকিং, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিভিন্ন মাঝারি শিল্প) ভারতে রয়েছে তার সাতটিই গুজরাটে। দুটি 'স্মার্ট সিটি' প্রকল্প চলছে সানন্দ এবং দহেজ শিল্প তালুকে। কানাডার পাশাপাশি জাপান হলো 'ভাইব্র্যাস্ট গুজরাট'-এর আরও একটি অংশীদার রাষ্ট্র। জাপানের এ গুজরাট-যোগাযোগ পুরোটাই ঘটেছে মোদির সময়ে এবং সক্রিয়তায়। ফলে জাপানের বিনিয়োগ মডেল তার কাছে হাতের তালুর মতো স্বচ্ছ। ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মোদি বারবার বলেছেন, তিনি বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর প্রশ্নে জাপানকে অগ্রাধিকার দিতে চান। ক্ষমতায় আসার পরই অল্প সময়ের মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে কিছু করে দেখাতে চাইবেন মোদি। সে ক্ষেত্রে জাপানকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে তার। পাশাপাশি জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রচনা করে চীনকেও স্বাধীন বিদেশনীতির একটি বার্তা স্বাভাবিকভাবেই দিতে চাইবেন মোদি।
গতকালই হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে কাজ করতে চায় ওবামা প্রশাসন। তার এ বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপিও। গুজরাট দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে মোদির সঙ্গে অসদ্ভাবের ইতিহাস যে পেছনে ফেলতে চাওয়া হচ্ছে তা গতকালের পরই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি দেশের বাণিজ্যিক স্বাস্থ্য ফেরাতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ লক্ষ থাকবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আরবের কিছু দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো মন্দা কাটিয়ে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। তা ছাড়া কৌশলগত উচ্চপ্রযুক্তির কিছু ক্ষেত্র বা পারমাণবিক ক্ষেত্র ছাড়া উৎপাদন বা পরিকাঠামো শিল্পে মার্কিনিদের সঙ্গে হাত ধরা অর্থহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন অথবা জাপানের মতো দেশগুলো বিনিয়োগ আনার প্রশ্নে শ্রেয়তর গন্তব্য বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারতে বিনিয়োগকারীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা জাপান হলো এমন একটি রাষ্ট্র যার সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতই ভারতের নেই, বরং গত ১০ বছরে তা ক্রমে মধুর থেকে মধুরতর হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে প্রধান অতিথি করে এ বাস্তবটিকেই স্বীকৃতি দিয়েছিল মনমোহন সরকার। এই প্রথম কোনো পূর্ব এশীয় দেশের নেতাকে এ সম্মান দিল ভারত। তার সেই জানুয়ারির সফরে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকের মেকানিজম তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের নৌ-সেনার মধ্যেও যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে চুক্তি হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সিনজো আবের সফরের দুই মাস আগেই জাপানের সম্রাট আকিহিতো ও সম্রাজ্ঞী মিচিকো পাঁচ দশক বাদে ভারত সফরে এসে এক সপ্তাহ থেকে গিয়েছেন।