ইউপিএ জোট সরকারের প্রধান হিসেবে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দায়িত্ব সামলানোর পর এবার অবসর নিলেন ড. মনমোহন সিং। আজ শনিবার দুপুর পৌণে একটা নাগাদ রাষ্ট্রপতি ভবনে যান বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। এরপর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের হয়েও রাষ্ট্রপতির হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে পঞ্চদশ লোকসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেন কমল নাথ। রাষ্ট্রপতি সেই সুপারিশ গ্রহণও করেছেন। তবে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত মনমোহন সিং-কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি।
এর আগে এদিন সকালেই মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য এক বৈঠকে বসে বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।ওই বৈঠকেই ১৫ তম সংসদ ভেঙে দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিন সকালে জাতির উদ্যেশ্যেও ভাষণ দেন ভারতের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। 'আমার জীবন এবং আমার কার্যকাল একটা খোলা বইয়ের মতো' জাতির উদ্যেশ্যে জীবনের শেষ ভাষণ দিতে গিয়ে এভাবে নিজের দশ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্ব কালের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
প্রথমে হিন্দি এবং পরে ইংরেজিতে নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মনমোহন সিং বলেন, 'সদ্য সমাপ্ত দেশের সাধারণ নির্বাচনে মানুষের রায়কে প্রত্যেকেরই মাথা পেতে নেওয়া উচিত। জাতির সেবায় আমি সবসময় আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি'। বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গত দশ বছরে ভারত অনেক সাফল্য দেখেছে, এর জন্য আমি খুব গর্বিত। তিনি বলেন গত এক দশকে দেশ অনেক এগিয়েছে কিন্তু দেশে এখনও উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে সেদিকে নজর দিতে হবে'। নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নতুন সরকারকেও শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নতুন সরকারের সাফল্য কামনা করেছেন মনমোহন সিং।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেই প্রধানমন্ত্রী চলে যান ৩ নম্বর মতিলাল নেহেরু রোডের নতুন বাংলোতে। ইতোমধ্যেই নতুন বাসিন্দাকে স্বাগত জানাতে ঝলমলে হয়ে উঠেছে নতুন বাংলোটি। জীবনের বাকি দিনগুলি তিনি এখানেই কাটাবেন।
আজ সন্ধ্যায় তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের এক চা চক্রে আপ্যায়িত করবেন মনমোহন সিং। রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বিদায়ী মন্ত্রিসভাকে নৈশভোজে ডেকেছেন। আগামী সোমবার লোকসভা ভোটে দলের এই শোচনীয় ফল নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য কংগ্রেস ওয়ার্কিং বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে কংগ্রেস সভানেত্রী তথা ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করলে ড. মনমোহন সিং-কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে টানা ১০ বছর সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। মোট দুই দফায় বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের শীর্ষ পদের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।