সদ্য প্রয়াত আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ-এর আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থের (ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট) ভূমিকা লিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার। সেখানে এক জায়গায় কিসিঞ্জার বলেছেন, 'জাতীয় শীর্ষ নেতার অসামান্য ব্যক্তিত্বের গুণাবলির দ্বারা সব প্রতিকূলতা এবং নেতিবাচক ভবিষ্যৎ বাণীকে পিছনে ফেলে একটা রাষ্ট্রকে কীভাবে অগ্রগামী করা যায় সে প্রসঙ্গে এ যাবৎকালের সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন লি কুয়ান ইউ। পরিস্থিতি, নাকি নেতার ব্যক্তিত্ব ভবিষ্যৎ পথ নির্মাণে প্রাধান্য বিস্তার করবে? যুগ যুগ ধরে চলে আসা দর্শন জগতের এই বিতর্কে লি কুয়ান প্রমাণ করেছেন ব্যক্তিত্বের ভূমিকাই প্রধান, পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা নয়।' শীর্ষ নেতৃত্বের গুণাবলি দ্বারা প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি এবং অভাবিত সাফল্যের চূড়ায় উঠেছে সিঙ্গাপুর। নেতৃত্ব দিয়েছেন সদ্য প্রয়াত লি কুয়ান ইউ। মাত্র তিন দশকে শূন্য থেকে শিখরে ওঠার দুঃসাহসী, অপ্রত্যাশিত এবং বিস্ময়কর সাফল্যের কাহিনী এখন সারা দুনিয়ার সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মের জন্য রোমাঞ্চকর পাঠ্য। লি কুয়ানের রাজনৈতিক আত্মজীবনীমূলক দুটি গ্রন্থের বাজার এখন তুঙ্গে। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের ঊষালগ্নে বিশ্বের বাঘা বাঘা ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- 'কঙ্কালসার, ভয়ানক বর্ণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত অস্বাভাবিক এই রাষ্ট্রের টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ভূখণ্ড কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়েছে অন্য কারও আশ্রিত হয়ে থাকার জন্য'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন মানচিত্রে সিঙ্গাপুর হয়ে যায় একটি অবাঞ্ছিত, অগ্রহণযোগ্য, অনাথ শিশুর মতো রাষ্ট্র। কেউ নেই, কেউ সঙ্গে নিতে চায় না। তারপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নিজেরা ভয়ানক বর্ণবাদী অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত। কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে ১৯৫৯ সালে প্রথমে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এবং পরবর্তীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে লি কুয়ান সিঙ্গাপুরকে আজ কোথায় নিয়ে এসেছেন তা এখন সবাই জানেন। মাত্র ৩০ বছরের মাথায় ১৯৯০ সালে লি কুয়ান শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু আয় ৪০০ সিঙ্গাপুর ডলার থেকে ১২,২০০ ডলারে উন্নীত হয়, যা এখন প্রায় ৫৫ হাজার ডলার। তাই অসম্ভবকে সম্ভব করার অন্তর্নিহিত সংগ্রাম, যুদ্ধের কাহিনী ও কৌশল সম্পর্কে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়কদের আগ্রহের শেষ নেই। আর সে জন্যই লি কুয়ানের আত্দজীবনীমূলক বইয়ের এত কাটতি। সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক সম্পদহীন, যে দেশের খাবার পানিসহ দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি আনতে হয় প্রতিবেশী দেশ থেকে, সেই দেশকে এত স্বল্প সময়ে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশে উন্নত করলেন কীভাবে তার কাহিনী বাংলাদেশের মতো একটা স্বল্পোন্নত সম্ভাবনাময় দেশের তরুণ নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। সুতরাং সিঙ্গাপুরের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাধীনতার প্রারম্ভিক দিনে কেমন অবস্থায় ছিল এবং একেকটি পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ লি কুয়ান কীভাবে মোকাবিলা করেছেন তার অল্প কয়েকটি প্রসঙ্গের সংক্ষিপ্ত আলোচনা কলামের সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যে আজকের লেখায় তুলে ধরব। প্রথমে একটু দেখে নিই কী অবস্থা থেকে শুরু করেছিলেন লি কুয়ান। সিঙ্গাপুর প্রকৃতির তৈরি কোনো ভূখণ্ড নয়। কৃত্রিমভাবে মানুষের তৈরি ছোট নগর রাষ্ট্র। প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে কিছু নেই। প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনের মতো পর্যাপ্ত কৃষি জমি নেই। আজকে সিঙ্গাপুর ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ হলেও শুরুতে এর কোনো ভিত্তি ছিল না। খাবার পানিসহ প্রতিটি শস্যকণা কিনতে হয় বিদেশ থেকে। ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার অব্যবহিত পর জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং ভয়ঙ্কর বিভাজনে সামাজিক সংহতির চরম ভঙ্গুর অবস্থায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়ে ওঠে নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। বৈদেশিক মুদ্রার একমাত্র উৎস ছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতির লেভি বাবদ বছরে ১০ কোটি পাউন্ড প্রাপ্তি। সদ্য স্বাধীন দেশের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা শূন্য। শুধু শূন্য নয়, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিপরীতমুখী ও নেতিবাচক। এ রকম একটা দিগন্তহীন অকূল দরিয়া পাড়ি দেওয়ার সংকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন লি কুয়ান। যাত্রার শুরুতেই মূল দর্শন ও লক্ষ্য ঠিক করে নিলেন। প্রথমেই ঠিক করলেন প্রতিবেশী দেশের মতো চলা যাবে না। কারণ তাদের যা আছে তার কিছুই সিঙ্গাপুরের নেই। দ্বিতীয়ত বুঝলেন, অবলম্বন ছাড়া এত বড় উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কূলের সন্ধান পাওয়া যাবে না। স্নায়ুযুদ্ধের তুঙ্গে থাকা বিশ্বব্যবস্থার চরম দ্বিভাজনে মধ্য দরিয়ায় দাঁড়িয়ে থাকলে কেউ সাহায্যের হাত বাড়াবে না। কিন্তু কোনদিকে যাবেন। পশ্চিমা পুঁজিবাদী ওপেন মার্কেট, নাকি সোভিয়েতের হাত ধরে সমাজতান্ত্রিক ধারায় হাঁটবেন। কঠিন ও উভয় সংকটপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এটাই তো রাষ্ট্রনায়কদের পরীক্ষা। এমন অবস্থায়ই রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। দ্বিভাজিত বিশ্বব্যবস্থায় শেষমেশ কোন পক্ষ বিজয়ী হবে তা বোঝার মতো উপাদান ষাট ও সত্তরের দশকে দৃশ্যমান ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অমানবিকভাবে মারণাস্ত্রের ব্যবহার এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের নিরবচ্ছিন্ন প্রোপাগান্ডায় সাধারণ মানুষের কাছে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা তখন ভয়ানক প্রশ্নের সম্মুখীন। অধিকন্তু সিঙ্গাপুরের তখন ২০ লাখ মানুষের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ চাইনিজ বংশোদ্ভূত। তারপর সহযোগিতার অজুহাতে তখন দক্ষিণ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে আমেরিকার কর্তৃত্বপরায়ণ চোখ রাঙানি ও পেশি প্রদর্শনের আচরণে লি কুয়ান নিজেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। অনেক ভেবেচিন্তে লি কুয়ান নিজের বিশ্বাসের ওপর বাজি ধরলেন। নিজের একান্ত প্রজ্ঞাজনিত অনুভূতি ও দূরদৃষ্টির নির্দেশনায় পশ্চিমা বিশ্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন লি কুয়ান। এতে তাৎক্ষণিক দুটি সুবিধা পাওয়া গেল। প্রতিবেশী দেশগুলো কমিউনিস্টবিরোধী হওয়ায় এই সিদ্ধান্তের ফলে সিঙ্গাপুরের জন্য আঞ্চলিক সংহতি অর্জন করা সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে সম্পদশালী জাপানসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমর্থন আদায়ের পথ সুগম হয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বের সবকিছু গ্রহণের ব্যাপারে শুরু থেকেই অত্যন্ত সতর্ক হন লি কুয়ান। কারণ পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষা ও সভ্যতার পরিপক্বতায় যে ধাঁচের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তারা চর্চা করে তা সিঙ্গাপুরের বাস্তবতায় আপাতত সম্পূর্ণ বেমানান মনে হয় লি কুয়ানের কাছে। তিনি অর্থনীতির খোলা বাজারের পথ অবলম্বন করলেও তার সঙ্গে সহজাতভাবে সঙ্গী হয়ে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা, ফড়িয়া আর দালাল-বাটপারদের আধিপত্যে যেন সিঙ্গাপুর না পড়ে তার জন্য অত্যন্ত কঠিন পদ্ধতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করলেন। বলা যায়, এক্ষেত্রে তিনি স্টিমরোলার চালিয়েছেন কঠোর হস্তে। সীমাহীন বাধাকে উপেক্ষা করেছেন। কঠোর সমালোচনার তোয়াক্কা করেননি। লক্ষ্য ও বিশ্বাসে অটল থেকেছেন, হেঁটেছেন একলা চলো নীতিতে। এই সীমাহীন কঠিন পথে তাকে কেউ থামাতে পারেনি, নিরবচ্ছিন্নভাবে ৩০ বছর চলেছেন। এর কারণ নিজের মনোবল ও সাহস তার সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। এর মূলে কাজ করেছে সেই মহাঅস্ত্র, যার দ্বারা নিজেকে ও পরিবারের সবাইকে দুর্নীতি সম্পর্কিত সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে পেরেছেন। তিনি নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্য নয়, ছেলে সন্তানের জন্য নয়, আত্মীয়র জন্য নয়- দৃশ্যত প্রমাণ করেছেন তিনি কঠিন ও রূঢ় হয়েছেন সিঙ্গাপুরের জন্য। এ কারণে সঠিক কাজের জন্য সঠিক লোক খুঁজে পেতে তার কষ্ট হয়নি। সঠিক সাহায্যকারী নির্ণয়ে ভুল সংশোধন করতে সময় নেননি। দলের কোনো মন্ত্রী বা নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত নিজে মনিটরিং, পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং প্রয়োজনমতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে একটুও বিলম্ব করেননি। এ সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ তিনি তার আত্মজীবনীমূলক ভাষ্য 'ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যাত্রার শুরুতেই তিনি ঘোষণা দেন- 'দুর্নীতিমুক্ত, মেধাবী ও দক্ষ মানবসম্পদই হবে সিঙ্গাপুরের মূল চালিকাশক্তি।' তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে বলেন, 'দুশ্চিন্তার কারণ নেই, অনেক কিছু গতানুগতিকভাবে ঘটবে। কিন্তু সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। বহুত্ববাদের তত্ত্বে বহু বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান সবার জন্য নিশ্চিত করা হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য হবে না। মেধাই হবে সবকিছুর নির্ণায়ক।' লি কুয়ানের এই ঘোষণা ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছে। কঠোর হতে গিয়ে অনেক নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে কঠিন সমালোচনাকে উপেক্ষা করেছেন, কখনো অনুতপ্ত হননি। জানতে চাইলে বলেছেন, 'এই পথে না গেলে আজ যেখানে সিঙ্গাপুর এসেছে, সেখানে আসা সম্ভব হতো না'। আত্মজীবনীর এক জায়গায় বলেছেন, 'কোথায় কত জোরে কথা বলতে হবে, আর কোথায় থুথু ফেলা যাবে, বা যাবে না, সেটিও তাকে নির্দেশ দিয়ে পালনে বাধ্য করতে হয়েছে'। তিনি নিশ্চিত করেছেন, সিঙ্গাপুরের সংহতি, সামাজিক শান্তি এবং সরকারের মূল লক্ষ্যকে পূর্বশর্ত হিসেবে মেনে মিডিয়াকে কাজ করতে হবে। কোনো কিছুই লাগামহীন থাকবে না। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে বলেছেন, 'আমার পকেটে সব সময় ধারালো রাজনৈতিক অস্ত্র থাকে। সুতরাং রাজনীতিতে কৌশলই বড় কথা, আপস নয়।' সিঙ্গাপুরের অভাবনীয় সাফল্য থেকে বাংলাদেশের মানুষ কি শিক্ষা নিতে পারে সেটি দেখা ও উপলব্ধির বিষয়। পশ্চিম, পূর্ব, কমিউনিস্ট, কাউকেই উপেক্ষা নয়, আবার কারও পেটের ভিতরে ঢুকে যাওয়া নয়। লি কুয়ান সিঙ্গাপুরের জন্য উদ্ভাবন করেছেন নিজস্ব দর্শন ও চেতনা। যেমনটি আমরা করেছিলাম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষিত ভিন্ন থাকলেও পঁচাত্তরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা ১০-১৫ বছর নিরবচ্ছিন্ন থাকলে বাংলাদেশের অবস্থান আজকে সিঙ্গাপুরের থেকে উন্নত অবস্থায় থাকত। প্রায় শতভাগ সমসত্তার একটি জাতিগোষ্ঠী এবং বঙ্গবন্ধুর মতো একজন কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক ও বিশ্বনন্দিত নেতা থাকায় প্রারম্ভে সিঙ্গাপুর থেকে অনেক সুবিধাজনক স্থানে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পঁচাত্তরের পর শুধু বঙ্গবন্ধুকেই দেশ হারাল তা-ই নয়, অভাবনীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব নিষ্পত্তিকৃত জাতীয় মৌলিক ইস্যুকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হলো। রাষ্ট্রীয় দর্শনের সবকিছুকে একেবারে একশত আশি ডিগ্রি উল্টাদিকে নিয়ে যাওয়া হলো। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। তাই ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যা ঘটেছে বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিতরা, যুদ্ধাপরাধীরা পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে এমন নজির বিশ্ব সভ্যতায় নেই।
সুতরাং এখান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে তার নিজস্ব পথে হাঁটতে হবে। হঠকারিতা নয়, ধৈর্যহারা নয়, বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে উগ্র ধর্মান্ধ পশ্চাদপদ এবং ইতিহাসের ঔজ্জ্বল্যকে বিকৃতকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে পারলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মতো উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব অঙ্গনে পরিচিতি পাবে। মহৎ স্বপ্ন থেকে মহৎ অর্জন সম্ভব। মেধা, শৃঙ্খলা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার দ্বারা সম্পদের অপ্রতুলতাকে কীভাবে জয় করা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রেখে গেলেন সিঙ্গাপুরের জাতির পিতা ও রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউ।
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।