১২ মার্চ, ২০১৬ ১১:৩৮

সমকালীন রাজনীতির নিষ্ঠুর বাস্তবতা!

গোলাম মাওলা রনি

সমকালীন রাজনীতির নিষ্ঠুর বাস্তবতা!

হিন্দি ছবির চমৎকার একটি সংলাপ দিয়ে আজকের প্রসঙ্গটি শুরু করা যাক। ছবিটির নাম আজ আর মনে আসছে না। তবে ছবির কাহিনী, সংলাপ এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনবদ্য অভিনয় হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। আদর্শবাদী নায়ক অত্যন্ত রাগী চরিত্রের এবং স্বভাবজাত বীর এবং সাহসী। অন্যদিকে ভিলেন ছিলেন নিষ্ঠুর, নির্মম এবং অসাধারণ কৌশলী।  নায়ক বেশ কয়েকবার ভিলেনের মুখোমুখি হয় কিন্তু ভিলেনের কূটকৌশল এবং বুদ্ধিমত্তার কাছে পরাজিত এবং লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে আসে। এ অবস্থায় নায়কের ক্রোধ আরও বেড়ে যায় এবং সে কিছুটা অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে। নায়কের পিতা ছিলেন অসম্ভব একজন বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি সন্তানকে ডেকে বললেন, বৎস যদি বিজয়ী হতে চাও তবে নিজের ক্রোধকে দমন কর এবং তোমার সমস্যাসমূহ চিহ্নিত কর। বোঝার চেষ্টা কর— সন্ত্রাসী মুংগু শাহ তোমার মূল সমস্যা নয়। তোমার বিজয় লাভের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সেসব লোক যারা মুংগু শাহকে প্রকাশ্যে ভয় করে এবং গোপনে তোমাকে উত্তেজিত করে। তুমি যখন বিপদে পড় তখন তারা নীরব থাকে এবং নিরপেক্ষ হওয়ার ভান করে।

সমকালীন রাজনীতির নিষ্ঠুর বাস্তবতার সঙ্গে হিন্দি সিনেমার উল্লিখিত সংলাপটির কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে তা বলার আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনপূর্ব এবং পরবর্তী কিছু ঘটনা বলা আবশ্যক। আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্ররা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পারেনি যে, ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফলাফল দীর্ঘমেয়াদে টেনে নেওয়া সম্ভবপর হবে। ফলে নির্বাচনের সেই উত্তাল গোলযোগপূর্ণ সময়ে তারা অতীব নরম সুরে বলাবলি করেছিল যে, এটা একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন মাত্র। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বটে— কিন্তু এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা দুশ্চিন্তার কোনো হেতু নেই। কারণ গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগ খুব দ্রুত একটি নির্বাচন দিয়ে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। বিএনপিসহ রাজপথে আন্দোলনরত দলগুলো তখন নিজেদের সফলতার ব্যাপারে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শক্তির একক সমূহকে তারা অবতার ভেবে নিশ্চিন্ত মনে সরকারের শোচনীয় পতনের কথা ভেবে পুলকিতবোধ করছিল। বিরোধী জোটের নেতাদের মধ্যে কাকে কোন মন্ত্রণালয় প্রদান করা হবে তা নিয়েও মোটামুটি চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়ে গিয়েছিল।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ২/৩ মাসের মাথায় দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দক্ষিণা বাতাসের ছোঁয়া লাগে এবং সবকিছু রাতারাতি উল্টে যেতে থাকে। বিরোধী দলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস হতাশায় পরিণত হয় এবং সরকারি দলের ভয়, সন্দেহ এবং দোদুল্যমানতা আত্মবিশ্বাসে রূপ নেয়। সরকার অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং বলতে গেলে পরিকল্পনা করেই বিরোধী দলের রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস, সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং ভিত্তি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলে। ফলে ২০১৪ সালের জুন-জুলাই মাসের মধ্যেই সরকার তাদের বিরোধী শক্তিকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা লাভ করে। সেই সফলতার অব্যাহত গতি ২০১৬ সালে এসে এমন দুর্দান্ত গতি লাভ করেছে যে ক্ষমতার ট্রেনে বসা যাত্রীরা পথের দুধারে বিরোধী দল নামক কিছুই দেখতে পারছে না। অন্যদিকে বিরোধী দলসমূহ ক্ষমতার ট্রেনের বুলেট গতির কারণে সর্বত্রই ট্রেনটিকে দেখতে পাচ্ছে। যে রাস্তাতে তারা তাদের যাত্রা শুরু করতে চায় সেখানে গিয়ে দেখতে পায় ক্ষমতার ট্রেন তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে নিজেদের দুর্দান্ত গতির ক্ষমতার মিশাইল কিছুটা হলেও সংযত করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলসমূহ ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। তারা ধরেই নিয়েছে যে বর্তমান পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নয়। ফলে তারা নিজেদের রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বাদ দিয়ে সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করছে, যা প্রকারান্তরে তাদের আরও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো— এ অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো এবং এ অবস্থার নিষ্ঠুর বাস্তবতাই বা কি? আমার মতে, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক জোট ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু গণমুখী হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্ষমতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়েছে দুর্বার গতিতে এবং জনগণের ক্ষমতা হরণ করেছে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে। সরকার এবং বিরোধী দল কেউই জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই সংগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক বিজয় লাভে আগ্রহী নয়। তারা কেবল ক্ষমতায় যাওয়া অথবা ক্ষমতায় টিকে থাকার বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে রাজনীতি করে এমন কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস তো দূরের কথা, লোক দেখানোর জন্যও ভুল করে মুখে উচ্চারণ করে না। নিজেদের কূটকৌশল, শক্তি প্রয়োগের নীতি এবং অগণতান্ত্রিক মত ও পথই তাদের কাছে অতীব প্রিয়। বিরোধী দলসমূহ বর্তমান সময়ে এসে ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। প্রকৃতির নিয়ম মতে মানুষ বিপদে পড়লে ভালো হয়ে যায়। অতীতের পাপ কর্মের জন্য অনুশোচনা করে এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহর দরবারে কৃতকর্মের জন্য মাফ চায়। তাদের মন নরম হয়ে যায়। দুষ্ট চিন্তা পরিহার করে বারবার গোপনে এবং প্রকাশ্যে প্রতিজ্ঞা করে বলে যে, এ যাত্রা রক্ষা পেলে ভবিষ্যতে আর ভুলেও কোনো অপকর্ম করবে না। প্রকৃতির এই অমিয় বিধিবিধান আমাদের দুর্দশাগ্রস্ত বিরোধী দলসমূহ কি আদৌ পালন করছে নাকি করছে না তা বিচারের ভার সম্মানিত পাঠকের ওপর দিয়ে আমি বরং সরকারি দলের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি।

আওয়ামী লীগ এখন দৃশ্যত ইতিহাসের সর্বোত্তম সময় পার করছে। দৃশ্যত বললাম এ কারণে যে, তাদের ভাবসাব, কথাবার্তা এবং অঙ্গভঙ্গিতে এক ধরনের অতি ভালো থাকার প্রত্যয় ফুটে উঠছে। তাদের মনের অভিব্যক্তি, একান্ত ভাবনা এবং দৃশ্যমান দৃশ্যের আড়ালে বিধাতার কৌশলসমূহ যেহেতু আমরা জানি না তাই ওইসব বিষয়ে আলোচনা না করাই ভালো। আওয়ামী লীগ নিজেদের কীভাবে মূল্যায়ন করছে তা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু যা জানি না তা হলো সৌভাগ্য দলটির ললাটে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বর্তমান সময়ের ক্ষমতাসীনরা যদি তাদের অতীতের সৌভাগ্য হারানোর কার্যকারণ খুঁজেন তবে দেখতে পাবেন যে, ক্ষমতার মসনদে বসে তারা বিজয়ীর মতো আচরণ করতে পারেননি। যুদ্ধজয়ী বীরেরা যেভাবে আচরণ করে ঠিক সেভাবে করে না যুদ্ধজয়ী কাপুরুষেরা। অন্যদিকে মহৎ লোকের বিজয় এবং মন্দ লোকের বিজয়ের মধ্যেও রয়েছে বিস্তর তফাৎ। সত্যিকার বিজয় এবং ছলচাতুরির বিজয়ের মধ্যে যেমন আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে তেমনি দুর্বৃত্তপনার বিজয় উল্লাস এবং আদর্শের বিজয় উল্লাস যে এক নয় তাও সবাই জানে।

বিজয় মানুষকে উদার করে তোলে। বিজয় মানুষকে আলোর পথ দেখায়। বিজয়ী সব সময় নিজেকে মহত্ত্বর বানানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালাতে থাকে। মানব জাতির ইতিহাসের মহান সব বিজয়গাথাকে পাথর কিংবা অন্য কিছুতে লিখে অমরত্ব প্রদানের চেষ্টা করা হয়নি। বিজয়গাথা সব সময় লিখিত হয়ে যায় মানুষের হৃদয়ে আর হৃদয়ের সেই কথামালা শত সহস্র বছর ধরে এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয়ে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে লিখিত হয়ে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর এভাবেই হোমারের মতো এক অন্ধ কবির বয়ানে রচিত হয় মহাকাব্য ইলিয়ড এবং ওডিসি। ফেরদৌসির বয়ানে রচিত হয় শাহনামা, অন্যদিকে ঋষি বেদব্যাস এবং বাল্মীকির বয়ানে আমরা পেয়ে যাই মহাভারত এবং রামায়ণের মতো অমর মহাকাব্য। ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো, সব বিজয়গাথা রচিত হয় বিজয়ীর দ্বারা। ইতিহাসের আরও নির্মম ও বাস্তব সত্য হলো বিজয়ীর লিখিত কোনো ইতিহাসই জমিনের বুকে টিকে থাকে না। কেউ সেই ইতিহাস পড়ে না এবং কালের বিবর্তনে মাত্র একশ বছরের মাথায় সেই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আচরণ সত্যিকার বিজয়ীর মতো হচ্ছে না, এমনকি হঠাৎ করে সুবিধাপ্রাপ্ত বা সুযোগ লাভকারী ব্যক্তিবর্গের বিচক্ষণ আচরণের সঙ্গেও তাদের আচরণকে তুলনা করা যাচ্ছে না। ২০১৬ সালে এসে যে সময়, সন্ধিক্ষণ এবং সুযোগ তারা পেয়েছে এটা অবশ্যই তাদের কর্মফল বা কর্মযোগ নয়। এটি প্রকৃতির একটি খেয়াল মাত্র। ইতিহাসে বহু সহস্রবার বহুজনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল। কেউ কেউ প্রকৃতির সেই অমোঘ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। অন্যদিকে যারা কাজে লাগাতে পারেননি তারা নির্মমভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং পৃথিবীবাসী তাদের নামধামও মনে রাখেনি। বাংলাদেশের সৌভাগ্যবান ইতিহাসের অমর নায়কের নাম রাজা গোপাল। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে হঠাৎ করেই তিনি গণতান্ত্রিকভাবে বাংলার রাজা হয়ে গেলেন। এর আগের একশ বছর অর্থাৎ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খিস্ট্রাব্দ অবধি বাংলায় কোনো রাজা ছিল না। ছোট ছোট জমিদার, গোত্রপতি একশ বছর ধরে নিজেদের মধ্যে নির্বিচার মারামারি করল। ইতিহাসের এ অরাজক সময়কে বলা হয় মাত্স্যন্যায়, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Fish Justice.

বাংলার সামন্ত প্রধানরা পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম যুগান্তকারী সর্বসম্মত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে গোপালকে তাদের রাজা নির্বাচিত করলেন। রাজকীয় অভিষেকের যে তাম্রলিপি পাওয়া গেছে সেখানে লেখা রয়েছে— মাছের রাজ্যে যে অরাজকতা হয় এবং বড় মাছেরা নিজের উদর পূর্তির জন্য ছোট মাছদের প্রতি যে বিচার করে থাকে ঠিক তেমন অবস্থায় চলা রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকৃতি গোপালকে সম্মানিত করেছে— তাকে রাজাদের রাজা বানিয়েছে। রাজা গোপাল তার ন্যায়পরায়ণতা, সুশাসন, গণতান্ত্রিক মনোভাব এবং বিচক্ষণতা দ্বারা এমন এক মহত্ত্বম রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করলেন যার ফলে তার পরবর্তী বংশধরেরা পাল বংশ নামে প্রায় সাড়ে চারশ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার সুযোগ পেলেন। সর্বভারতীয় রাজনীতির তিনজন কিংবদন্তি প্রায় একইভাবে প্রকৃতির দয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এবং নিজেদের কর্মদ্বারা ইতিহাসে অমর হওয়ার ভিত্তি গড়েছিলেন। তারা হলেন সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক, সুলতান সামসুদ্দীন ইলতুিমস এবং সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবন।

সমকালীন রাজনীতির ধারা এবং শাসন পদ্ধতি বোঝার জন্য জেফারসন ডকট্রিন আলোচনা করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন জনগণ, সরকার এবং শাসনব্যবস্থার চমৎকার একটি সূত্র আবিষ্কার করেছেন, যা ইতিহাসে জেফারসন ডকট্রিন হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘যখন জনগণ সরকারকে ভয় পায় তখন বুঝতে হবে জালিমের জংলি শাসন তাদের গ্রাস করেছে। অন্যদিকে সরকার যখন জনগণকে ভয় পায় তখন বুঝতে হবে সেখানে স্বাধীনতা রয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রে বর্তমানে কোনটি রয়েছে তা সম্মানিত পাঠক নিজ নিজ মর্জি, মেজাজ, রুচি এবং পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করে নিলে নিবন্ধ লেখকের বহুৎ ফায়দা হবে এবং অনাহুত ঝক্কি ঝামেলা থেকে রেহাই মিলবে।

আমরা আজকের নিবন্ধের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। হিন্দি ছবির যে সংলাপটি দিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম সেই সংলাপের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে নিবন্ধের ইতি টানা হবে। বিরোধী দলগুলো সাতটি বছর ধরে ভয়ানক রাগ চণ্ডালের মতো উত্তেজিত আচরণ করে বার বার তাদের কর্মী-সমর্থকদের নতুন নতুন বিপদে ফেলেছে। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা নিজেদের নেতা-কর্মীদের তাদের কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। আমি নিশ্চিত যে, দেশের বেশির ভাগ জনগণ সরকারের বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড পছন্দ করছে না। তারা সরকারের ওপর প্রচণ্ড ত্যক্তবিরক্ত এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিক্ষুব্ধ। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা সরকারের বিকল্প হিসেবে দেশের কোনো বিরোধী দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চায়।

আমার মনে হয় না যে, দেশের জনগণ বিরোধী দলসমূহকে বিশ্বাস করে এবং তাদের প্রতি এমন আস্থা স্থাপন করেছে, যাতে তারা আগামী দিনে বর্তমান সরকারের চেয়েও ভালো কিছু করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পুরো বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশ আজ ঘন কুয়াশায় আবৃত। ফলে জনগণ একহাত দূরবর্তী কোনো জিনিসকে দেখতে পাচ্ছে না। নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, আগামীকালটি কেমন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো মানুষকে ভবিষ্যতের জন্য কোনো স্বপ্ন দেখাতে পারছে না এবং কোনো বিশ্বাসযোগ্য আশার বাণীও শোনাতে পারছে না।  ফলে সরকার ও বিরোধী দল যে যাই বলুক না কেন— আমাদের আগামী দিনগুলো যে তাদের নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এ কথা অনুধাবনের জন্য খুব বেশি জ্ঞান-গরিমার দরকার নেই।


লেখক : কলামিস্ট।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১২ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা

সর্বশেষ খবর