৭ জুন, ২০২০ ১০:৪৭

অভিশপ্ত অথর্ব দুর্নীতিবাজদের জন্য মানুষ মরতে পারে না

পীর হাবিবুর রহমান

অভিশপ্ত অথর্ব দুর্নীতিবাজদের জন্য মানুষ মরতে পারে না

জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নেন। ক্ষমতা গ্রহণ করেন শপথে। মন্ত্রী হন। শপথ ভাঙ্গেন। সংবিধান আইন ও জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদার বরখেলাপ করেন। চেয়ারে বসেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেন। অব্যবস্হাপনা শুরু হয় এখানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই বিশ্বাস করেন তিনিই বিশ্বাস ভঙ্গ করেন। এভাবেই দেশের স্বাস্থ্যখাতে জনগণের বরাদ্দের অর্থ লুট হয়। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত নিরাপদ করা যায়নি। চিকিৎসা ব্যবস্থা দেউলিয়া হয়।

যিনি জনগণের টাকায় লেখাপড়া করে ডাক্তার হন, স্বাস্থ্যবিভাগে কর্মকর্তা হন, যে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী জনগণের টাকায় পড়াশোনা করে দায়িত্ব পান, তাদের একটা অংশ দুর্নীতির সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী করেন সারাদেশে। লোভ লালসায় পবিত্র সেবার ঈমানি পরীক্ষা ভুলে যান। কেরানী আবজাল ১৫শ কোটি টাকা বানিয়ে বিদেশ পালায়। পর্দার দাম ৩৭ লাখ হয়। ৫ হাজার টাকার বই ৮৫ হাজার। জাইমার রাজ্জাকের হাতে রাখা হয় সরবরাহ। এন ৯৫জাল মাস্ক সরবরাহ ধরা পড়লেও রক্ষা হয়। তদন্ত রিপোর্ট আসে না। লাইসেন্স বাতিল হয় না। মিঠু সিন্ডিকেট বহাল দাপটেই থাকে অনন্তকাল। আগ্রাসী দুর্নীতিবাজদের বেপরোয়া দাপট চলে। দুর্নীতির অভয়াশ্রম হয়ে ওঠে স্বাস্হ্যখাত। উচ্চপর্যায়ে দুদকের থাবাও পড়ে না। করোনাকালে ভয় আতঙ্ক চিকিৎসা ব্যবস্হা ভেঙ্গে দেয় মানুষের মনোবল।

করোনাকালে দেউলিয়া চিকিৎসা ব্যবস্হায় মানুষ অসহায়। কত বড় বড় বিত্তশালী, কত ক্ষমতাবান নেতা, বিভিন্ন পেশার মানুষ, এমনকি কত চিকিৎসকও জীবন দিচ্ছেন। বড় বড় কথা বলার প্রতিযোগিতা করেছেন ক্ষমতাবানরা। চিকিৎসা ব্যবস্হা শক্তিশালী করতে পারেননি। মানুষ আজ চিকিৎসা পায় না কোথাও। আইসিইউ নেই, অক্সিজেনের হাহাকার, চিকিৎসার আকুতি। বছরের পর বছর চলে আসা অনিয়ম দুর্নীতি অব্যবস্হাপনার কি করুণ পরিনতি!

করোনার বাইরেও চিকিৎসা নেই হাসপাতালে হাসপাতালে। ডাক্তাররা অনেকে লড়ছেন। তবু সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে সুসংগঠিত শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্হা গড়া যায়নি। দেশের অন্যখাতের চিত্রও হয়তো করুন। করোনায় স্বাস্হ্যের মেকাপ খুলে দেওয়ায় কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে এসেছে। লুটপাটে ডুবে থাকাদের এ খাতে রেখে সংকট উত্তরণের সুযোগ নেই। এদের বের করে দিতে হবে। মহামারি বাড়ছে।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল বা সিএমএইচে চাইলেই সবাই যেতে পারেন না।আর সিএমএইচে যুগ যুগ ধরে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে অন্য সরকারি হাসপাতাল কেনো পারেনা? সিএমএইচে দক্ষ জবাবদিহিমূলক ব্যবস্হাপনা আছে। সরকারি হাসপাতালে ব্যবস্হাপনা নেতৃত্ব বলে কিছু নেই।জবাবদিহিতা শৃংখলা বলে কিছু নেই। সরকারি হাসপাতালে কেনো দক্ষ ব্যবস্হাপনা নেই, কেনো সুযোগ সুবিধা নেই, কারণ ব্যর্থ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব তা গড়ে উঠতে দেয়নি। উপর থেকে সিন্ডিকেটের ধারায় চলে।

আমরা করোনা প্রতিরোধের প্রথমপর্বে ব্যর্থ। এখন প্রতিকার। চিকিৎসা ও সেবা দিতেই হবে। অভিশপ্ত লুটেরাদের জন্য মানুষ জীবন দিতে পারে না।করোনা রোগীদের কেনো কোনো নাগরিককেই অবহেলা করার সুযোগ নেই। স্বাস্হ্যবিভাগের মহাপরিচালক ডা: আবুল কালাম আজাদ ভর্তি হয়েছিলেন সিএমএইচে। মানুষের জন্য রেখেছেন কুয়েত মৈত্রী, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল।

এসব হাসপাতালের নাম আগে শুনেছে কেউ? হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে পথে মৃত্যুর খবর আসে! এটা স্বাস্হ্য সেবা? তারপরও বড় বড় কথা! দক্ষ সৎ ম্যানেজমেন্টে আনতে হবে স্বাস্হ্য বিভাগে। সরকারি হাসপাতালে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে হবে দক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্হা।পাঁচতারকা হাসপাতাল ভর্তি না করলে লাইসেন্স বাতিল করে কঠোর ব্যবস্হা নিতে হবে।

লেখক: বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর