জাতিসংঘের সাধারণ সভাকে সামনে রেখে প্রতি বছর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয় সরকারের পক্ষে বিপক্ষে দলীয় আন্দোলনের মহা উৎসব। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা নিউইয়র্কে জড়ো হতে থাকেন। প্রথমে জ্যাকসন হাইটসে সরকারের পক্ষে বিপক্ষে মিছিল মিটিং করেন। প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাতাহাতি- মারামারি করেন। এসব শেষ হয় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে গিয়ে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ সভা কাভার করতে গেলে এসব চোখে পড়ে সাংবাদিকদের।
বিপরীত দৃশ্যও আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের দেশের সমস্যা নিয়ে হাজির হন। দেশের পক্ষে সুশৃঙ্খলভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মানববন্ধন করেন। সভা-সমাবেশ করেন। একমাত্র বাংলাদেশিরা তাদের দল আর দলের নেতানেত্রীদের জন্য মারামারি করেন। যতদিন যাচ্ছে এদের সংখ্যা বাড়ছে।এদের বেশিরভাগই অসৎ। এদের দেশপ্রেম নেই। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে এদের কোন চিন্তা নেই। দেশের মানুষের জন্য মায়ামমতা নেই। নিজের দল ক্ষমতায় গেলে অর্থকড়ি কামাতে পারবে, সেই আশাতেই দিন গোনে। আর কিছু না।
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশিদের এইসব কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। রেমিটেন্স যোদ্ধা পড়েছেন বিপদে। বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা রেস্ট্রিকশন দিচ্ছে। যার বড় একটা কারণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নোংরা কর্মকাণ্ড। এই মানুষগুলো দল যখন ক্ষমতায় আসে, দেশে এসে ফাইল পাশ করা থেকে শুরু করে বড় বড় প্রজেক্ট, ব্যবসা হাতিয়ে নেয়। সরকারি দলীয় নেতাকর্মী মন্ত্রী মিনিস্টার তাদের সহযোগিতা করেন। গিভ এন টেক লেনদেন করেন। নিজেরা তো নেনই, দলীয় নেতাকর্মী মন্ত্রী মিনিস্টারদের টাকা পাচারে তারা সহযোগিতা করেন।
রেমিটেন্স যোদ্ধারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, খেয়ে না খেয়ে রোজগার করে যে টাকা পাঠান, সেই টাকা এরাই আবার অসৎ ভাবে কালো টাকা হিসেবে বিদেশে পাচার করে নিয়ে যান। এই লোকগুলোর জেল জরিমানার কোনো ভয় নেই। দল কোনো আসলে দেশে আসেন। দল ক্ষমতা থেকে চলে গেলে আবার বিদেশে চলে যান। বিদেশে বসে দুর্নীতি করে পাচার করা টাকা দিয়ে আরাম আয়েশে থাকে। আর সরকার বিরোধী আনন্দোলন করেন। যেসব দল সরকারে আসেন তাদের এসব বিষয় নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সব সরকারি দলের মানুষ এইসব কর্মকাণ্ড করে থাকেন।
বিদেশে বসে আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার দেশের স্বার্থেই। দরকার হলে আইন করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কয়েকদিন আগে নিজেদের দেশের কনস্যুলেটে হামলা ভাংচুরের মত ঘটনা ঘটিয়েছেন। লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা করেছেন অনেকে । ২৪ আগস্ট জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবসের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস আয়োজিত মতবিনিময় সভায় হামলা ভাঙচুর বিক্ষোভ করেন পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে দুষ্কৃতকারীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং কয়েকজনকে আটক করে। এসব ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষুণ্ন করে তা ভাবছেন না কেউ। দেশের ভিতরে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিরোধিতা করার সভ্য পথ ছেড়ে যারা বিদেশে নোংরা খেলায় মেতে উঠেন, তাদেরকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। সেই হিসেবে বিচার করতে পারলেই সম্ভবত এসব নোংরা খেলা বন্ধ হবে!
বিডি প্রতিদিন/মুসা