“বহুপাক্ষিকতার ক্ষেত্রে সৃষ্ট হুমকিসমূহ: সংসদীয় জবাব (Emerging challenges to multilateralism: A parliamentary response)” বিষয়টিকে সামনে রেখে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হল ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর বার্ষিক সংসদীয় শুনানি (Annual Parliamentary Hearing)।
এ শুনানীতে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. এ এফ এম রুহুল হক এমপির নেতৃত্বে ডা. মো: আফসারুল আমিন এমপি, মো: আবু জহির এমপি, বেনজীর আহমেদ এমপি এবং আহসান আদেলুর রহমান এমপি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সাত পর্বে বিভক্ত সংসদীয় শুনানীর দু’দিনের এই আলোচনাকে এগিয়ে নেওয়া হয়। এসব পর্বে অংশ নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ বাংলাদেশকে বহুভাষাভাষী, বহু সংস্কৃতির এবং বহুধর্মের একটি দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বহুপক্ষবাদ এবং বহুভাষিক সংস্কৃতির চর্চা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত সময়োপযোগী পদক্ষেপসমূহের কথা সবিস্তারে উপস্থাপন করেন। এতে উঠে আসে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমি ও সম্পদ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সমেত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি এবং তা বাস্তবায়নের কথা।
প্রতিনিধি দলের নেতা ডা. এ এফ এম রুহুল হক এমপি ‘ক্রসরোডে বহুপাক্ষিকতাবাদ: সামগ্রিক মূল্যায়ন ও উদ্ভূত হুমকিসমূহ’ শীর্ষক পর্বে বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, “বাংলাদেশ একটি নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রবক্তা। এই ব্যবস্থা জাতিসমূহের সার্বভৌমিক সমতাকে সবসময়ই সমুন্নত রাখে এবং আভ্যন্তরীন বিষয়ে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসৃত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি -‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ থেকে বাংলাদেশ এই বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়েছে”।
তিনি আরও বলেন, “বহুপাক্ষিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ”।
জাতিসংঘসহ বিদ্যমান অন্যান্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার কারনেই সংঘাত, দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের বিভীষিকা পেরিয়ে বিশ্বে শান্তি, সহযোগিতা, মানবিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতা সমুন্নত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এমপি রুহুল হক। তিনি বহুপাক্ষিকতার সফলতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু হুমকির কথা উল্লেখ করেন।
এগুলো হলো- আদর্শ বিচ্যুত রাজনীতি, রাজনৈতিক তহবিলের ঘাটতি, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা, প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা, এসডিজি ও শান্তিরক্ষাসহ প্রধান বহুপাক্ষিক এজেন্ডাসমূহের বাস্তবায়নে সম্পদের ঘাটতি এবং অভিবাসনের বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে সহায়তার অভাব।
অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অরক্ষিত দেশ, জাতি ও জনগোষ্ঠীসমূহকে সুরক্ষিত করতে বহুপাক্ষিকতাবাদের এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই বিশ্বসভাকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতা ডা. এ এফ এম রুহুল হক এমপি।
আইপিইউ’র উদ্বোধনী সেশনে কী-নোট স্পীচ প্রদান করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ । এছাড়া উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন ৭৩তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এসপিনোসা গার্সেজ ও আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েলা কুইভাস ব্যারন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর