২০ এপ্রিল, ২০১৯ ১০:১০

যুুক্তরাষ্ট্রে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’ অবমুক্ত হলো যেভাবে

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

যুুক্তরাষ্ট্রে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’ অবমুক্ত হলো যেভাবে

বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে প্রবেশ পথেই স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। সেখানে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন, সাথে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। ছবি : এনআরবি নিউজ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয় ২০০০ সালে। একই বছর ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়। ৩৫১০ ইন্টান্যাশনাল নর্থ ওয়েস্ট-এ অবস্থিত এই ভবনের মিলনায়তনের নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন।’ নামফলকটিও  লাগানো হয় মিলনায়তনের প্রবেশ পথে। এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য কেউই করেননি। 

তবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ হাসান আহমেদ ২০০২ সালে এখানে যোগদান করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে নিজের পরিচয়পত্র প্রদানের দুদিন পরই ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’র নামফলক উধাও হয়ে যায়। সেটি ফেলে দেয়া হয়। প্লাস্টার করা হয় স্থানটি। 

এরপর থেকে সেই মিলনায়তনকে ‘বাংলাদেশ চ্যান্সেরি মিলনায়তন’-এ পরিণত করার চেষ্টা চলে। এমন অবস্থায় ২০০২ সালের ২৬ মার্চের পরই (লাবলু আনসারের সম্পাদনায়) বার্তা সংস্থা ‘এনা’র বরাত দিয়ে ঢাকায় কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’ মুছে ফেলার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এভাবে চলে কয়েক মাস। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’ মুছে ফেলার পরও সংশ্লিষ্টরা কোনো উচ্চবাচ্য করেননি প্রসঙ্গে আরেকটি সংবাদ পরিবেশিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে। সে সংবাদে নামফলক মুছে ফেলার একটি ছবিও সরবরাহ করেছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসরত সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা হারুন চৌধুরী। 

২০০৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে আরেকটি সংবাদ পরিবেশিত হয় এনা’র মাধ্যমে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তদানিন্তন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমানে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া উদ্ধৃত করা হয়। সে সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকণ্ঠ এবং দৈনিক ইত্তেফাকে। একই বছর ১৫ আগস্টের আগে, পরের বছর ৭ মার্চের আগে আরও দুটি সংবাদ পরিবেশন করে ‘এনা’। সে সব সংবাদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মুখ খুলেননি। এভাবে গণআন্দোলনের মুখে বিএনপি-জামায়াত সরকার থেকে সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে হুমায়ূন কবির ২০০৭ সালের জুলাইতে যোগদানের সময়েই ‘এনা’ কর্তৃক আরেকটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং অবমুক্ত হয় ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’। 

নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ স্থাপনের একটি দাবি এক দশক যাবত উত্থাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সমীপে। প্রতি বছরই জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের মুখোমুখী হয়েছেন। সে সময়েই বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটিতে নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবির সাথে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’র দাবি তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ এমন একটি ভবন ক্রয় করা উচিত যেখানে কন্স্যুলেট জেনারেল অফিসের সাথে থাকবে একটি কমিউনিটি সেন্টার, লাইব্রেরী, কালচারাল সেন্টার ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র, সোনালী এক্সচেঞ্জ, জনতা এক্সপ্রেস অফিস, নিউইয়র্কে বিমান এলে তার কান্ট্রি ম্যানেজারের অফিস। আর এই ভবনের নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন।’ ভবনের ওপরে উড়বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা। সামনে থাকতে পারে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অথবা স্ট্যাচু। আর এভাবেই জাতিসংঘের এই শহরে বাংলাদেশকে খুব সহজে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। 

এ দাবির প্রশ্নে বেশ কয়েকবারই বলা হয়েছে যে, সকলের জন্যে উপযোগী একটি ভবন খোঁজা হচ্ছে। সর্বশেষ এ মাসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন জানালেন যে, ম্যানহাটানে ভবন ক্রয়ের জন্যে বিপুল অর্থ দরকার। ৩/৪ তলার পূর্ণাঙ্গ একটি ভবন ক্রয়ে ৬৭ মিলিয়ন ডলারের বেশী লাগতে পারে। সরকার তা বিবেচনায় রেখেছে। একইসাথে তিনি প্রবাসীদের প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন তুলনামূলকভাবে কমদামের একটি ভবনের খোঁজ দেয়ার জন্যে। 

এ প্রসঙ্গে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের লোকজন বলেছেন, দিন যত যাবে ম্যানহাটানে ভবনের দাম বাড়তেই থাকবে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব কেনাই উত্তম। 

এ ব্যাপারে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাকে স্মারকলিপি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। 

উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকালে ড. এ কে এ মোমেন বাংলাদেশ মিশন এবং স্থায়ী প্রতিনিধির বাসভবন ক্রয় করায় প্রতি মাসে ১২ হাজার ডলারেরও অধিক সাশ্রয় হচ্ছে। একইভাবে কন্স্যুলেট অফিসও নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা সম্ভব হলে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবার পাশাপাশি বহুজাতিক এই সিটিতে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’র প্রত্যাশাও পূরণ হবে বলে সুধীজনের মন্তব্য। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর